নয়াদিল্লি: বিপদে-আপদে এতকাল পরস্পরের পাশেই থেকেছে দুই দেশ। কিন্তু এ বার ভারতের উদ্বেগ বাড়ায়ে তুলল ভুচান। ডোকলাম সংঘাত নিয়ে ত্রিপাক্ষিক সমাধানের পক্ষে সওয়াল করল তারা (Bhutan PM's China Comment)। ডোকলাম নিয়ে চিনেরও বলার অধিকার রয়েছে বলেই এক অর্থে কার্যত সিলমোহর দিল ভুটান (India China Conflict)।
২০১৭ সালে প্রায় দু’মাস সেখানে মুখোমুখি অবস্থান করেছিল ভারত-চিন
ছ’বছর আগে ডোকলামে ভারত-চিনের সংঘাতের স্মৃতি এখনও টাটকা। ২০১৭ সালে প্রায় দু’মাস সেখানে মুখোমুখি অবস্থান করেছিল ভারত-চিন, দুই দেশের সেনা। সেখানে ভুটানের এলাকায় ঢুকে চিন রাস্তা তৈরি করছিল বলে অভিযোগ তোলা হয় ভারতের তরফে। সেই রাস্তা তৈরি হলে বাংলার শিলিগুড়ি পর্যন্ত চিনের ঢোকার পথ সহজ করবে বলে ছিল আশঙ্কা।
এত দিন পর সেই নিয়ে মুখ খুললেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ভুটানের একার পক্ষে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আমরা তিনটি পক্ষ রয়েছি। এখানে বড় বা ছোট বলে কিছু নেই। তিনটি দেশই এখানে সমান।”
শেরিং আরও বলেন, “আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত। বাকি দুই পক্ষ রাজি থাকলে যে কোনও মুহূর্তে আলোচনা হতে পারে।” অর্থাৎ ভারত, চিন এবং ভুটান, তিন দেশের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ডোকলাম মালভূমি নিয়ে চিনের কথা বলার অধিকার রয়েছে বলেই কার্যত বুঝিয়ে দিলেন তিনি।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যে ভারতের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতিবিদরা। তাঁদের মতে, আঞ্চলিক বিবাদে চিনা হস্তক্ষেপকে একপ্রকার বৈধতাই দিলেন শেরিং, যা দিল্লির মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। কারণ ডোকলাম মালভূমি অঞ্চল একেবারে শিলিগুড়ি করিডোরের ঘেঁষে অবস্থিত। সঙ্কীর্ণ ওই ভূখণ্ডই উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করে রেখেছে।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ওই অঞ্চল আন্তর্জাতিক মানচিত্রে রয়েছে। ওই জায়গাটিকে বাতাং লা বলা হয়। তার উত্তরে পড়ে চিনের চুম্বি উপত্যকা, দক্ষিণ থেকে পূর্বে ভুটান এবং পশ্চিমে ভারতের সিকিম। চিনের দাবি, ত্রিদেশীয় জংশনকে আরও সাত কিলোমিটার দক্ষিণে সরিয়ে, গিপমোচি পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যাওয়া হোক। কিন্তু তেমন হলে, গোটা ডোকলাম মালভূমি আইনত চিনের দখলে চলে যাবে, যাতে তীব্র আপত্তি দিল্লির।
যদিও বছর চারেক আগেও সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থান ছিল ভুটানের। ২০১৯ সালে শেরিং জানিয়েছিলেন, তিন দেশের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ওই মালভূমিতে কোনও পদক্ষেপই কাম্য নয়। তার পরও তাঁর এই পরিবর্তিত অবস্থানের নেপথ্যে চিনের সঙ্গে ভুটানের বর্তমান সমীকরণ দায়ী বলে মত কূটনীতিকদের।
চিনা আগ্রাসনের সামনে মাথানত করল ভুটান!
কারণ ২০১৭ সালে ডোকলাম থেকে চিনা সেনা সরে গেলেও, আমো চু নদী উপত্যকা বরাবর, ভুটানের এলাকাতেই ঢুকে পড়ে তারা। তার পর থেকে সেখানে একাধিক গ্রাম, রাস্তা গড়ে তুলেছে তারা। তাই চিনা আগ্রাসনের সামনে ভুটানের মাথানত করার প্রমাণ হিসেবেও শেরিংয়ের মন্তব্যকে দেখছেন অনেকে।