নয়াদিল্লি: বিধানসভা নির্বাচনের আগে 'শিশমহল বিতর্কে' সরগরম দিল্লির রাজনীতি। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নিজের বাসভবনকে অরবিন্দ কেজরিওয়াল শিশমহলে পরিণত করেছিলেন বলে অভিযোগ বিজেপি-র। বাংলো সাজাতে তিনি ৩৩ কোটি টাকা খরচ করেছিলেন দাবি সামনে আসছে। সেই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে বিজেপি নেতৃত্ব, সকলেই আম আদমি পার্টির প্রধানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। নির্বাচনী লড়াইয়ে প্রতিযোগিতা রয়েছে জেনেই কেজরিওয়ালকে প্যাঁচে ফেলার চেষ্টা চলছে বলে যদিও দাবি করছে আম আদমি পার্টি। (Arvind Kejriwal Sheesh Mahal Row)


দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বাসভবন সাজাতে কেজরিওয়াল কোটি কোটি টাকা খরচ করেছেন বলে অনেকদিন আগে থেকেই বিতর্ক। সেই বিতর্কে সম্প্রতি ইন্ধন জুগিয়েছে একটি রিপোর্ট। কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন সাজাতে কত টাকা খরচ করেন, তা নিয়ে তদানীন্তন কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল গিরীশচন্দ্র মুর্মু একটি রিপোর্ট তৈরি করেন। ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর পদ থেকে অব্যাহতি নেন গিরীশ, তার একসপ্তাহ আগেই ওই রিপোর্টে তিনি সই করেন বলে জানা গিয়েছে। সেই রিপোর্টে খরচের কী হিসেব রয়েছে, তা সামনে এনেছে The Indian Express. আর সেই নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। (Delhi Sheesh Mahal Row)


ওই রিপোর্ট অনুযায়ী-



  • শুধুমাত্র পর্দা কিনতেই ৯৬ লক্ষ টাকা খরচ দেখানো হয়। রান্নাঘরের জিনিসপত্র বাবদ খরচ দেখানো হয় ৩৯ লক্ষ টাকার। 

  • টিভি কনসোল কিনতে ২০.৩৪ লক্ষ, ট্রেডমিল ও শরীরচর্চার সামগ্রী কিনতে ১৮.৫২ লক্ষ, রেশমের কার্পেট কিনতে ১৬.২৭ লক্ষ এবং মিনিবারের জন্য ৪.৮০ লক্ষ টাকা খরচ দেখানো হয়।

  • দেওয়ালে মার্বেল বসাতে ২০ লক্ষ টাকা খরচ দেখানো হয় প্রথমে। পরে তা বেড়ে হয় ৫৬.৮৯ লক্ষ টাকা। 

  • মেঝেতে বসানোর জন্য প্রথমে ৫.৫ লক্ষ টাকা দর ঠিক হয়। পরে তা বেড়ে হয়ে যায় ১৪ লক্ষ টাকা। 

  • কাজ শুরু হওয়ার পর বিল্ট আপ এরিয়ে ১৩৯৭ স্কোয়্যার মিটার থেকে বেড়ে ১৯০৫ স্কোয়্যার মিটারে পরিণত হয়। 

  • রিপোর্টে বলা হয়েছে, দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন নতুন করে সাজাতে ৭.৯১ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে প্রথমে জানা যায়। ২০২০ সালে ৮.৬২ কোটি টাকার বরাত দেওয়া হয় তার জন্য। কিন্তু পূর্ত দফতর যখন কাজ শেষ করে, খরচের অঙ্ক বেড়ে ৩৩.৬৬ কোটি টাকা হয়ে যায়।


জনগণের টাকায় কেজরিওয়াল নিজের জন্য 'শিশমহল' গড়েছিলেন বলে তাই সরব হয়েছে বিরোধীরা। রিপোর্টটি এখনও দিল্লি বিধানসভায় ওঠেনি। তবে বেশ কিছু অনিয়মের কথা তাতে উঠে এসেছে বলে জানা গিয়েছে।


শুক্রবার বিজেপি-র হয়ে দিল্লিতে প্রচার করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তাঁর মুখেও 'শিশমহল' প্রসঙ্গ উঠে আসে। মোদিকে বলতে শোনা যায়, 'গত ১০ বছরে দিল্লিতে 'আপ'দ নেমে এসেছে। আন্না হাজারেকে সামনে রেখে দিল্লিকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে কিছু অসৎ লোক। দিল্লির মানুষ ঠিক করেছে আর এই 'আপ'দকে বরদাস্ত করবেন না তাঁরা'।


এর পাল্টা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের খরচ নিয়ে মোদিকে খোঁচা দেন কেজরিওয়াল। তাঁর বক্তব্য ছিল, 'নিজের জন্য যিনি ২৭০০ কোটি টাকার বাড়ি বানিয়েছেন, যিনি ৮৪০০ কোটি টাকার বিমানে চেপে ঘোরেন, যিনি ১০ লক্ষ টাকার স্যুট পরেন, তাঁর মুখে শিশমহলের কথা মানায় না। আমি কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে চাই না। আমি বদনাম করার রাজনীতি করি না। আমি উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি'।


এর পরও বিতর্ক যদিও থামছে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও কেজরিওয়ালকে 'শিশমহল' বাণে বিদ্ধ করেছেন। কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে যে প্রবেশ বর্মাকে প্রার্থী করেছে বিজেপি, তিনিও আক্রমণ শানিয়েছেন। জনগণের করের টাকায় কেজরিওয়াল নিজের জন্য শিশমহল বানিয়েছেন, তিনি জনগণের সামনে সত্য তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন প্রবেশ। 


আবগারি দুর্নীতি মামলায় জামিন পাওয়ার পর ১৭ সেপ্টেম্বর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন কেজরিওয়াল। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনও ছেড়ে দেন ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে। অডিট রিপোর্ট নিয়ে বিতর্কে কেজরিওয়ালের হয়ে সাফাই দিয়েছে আম আদমি পার্টিও। তাদের দাবি, নির্বাচনে পেরে উঠবে না জেনেই, বিজেপি নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছে। কেজরিওয়ালকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে।


প্রধানমন্ত্রী নিজে যেখানে ২৭০০ কোটি টাকার বাড়িতে থাকেন, ৮৪০০ কোটির বিমান চাপেন, তাঁর অন্যের দিকে আঙুল তোলা উচিত নয় বলেও দাবি আম আদমি পার্টির। পাশাপাশি, দলের যুক্তি, মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন সরকারি সম্পত্তি। কেজরিওয়ালের নিজের বাড়ি নয়। ভবিষ্যতে সেখানে অন্যরাও থাকবেন।