বাঁকুড়া ও কলকাতা: বিধানসভায় দমবন্ধ করে দেব, বাইরেও আন্দোলন জারি থাকবে। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে এমনই হুঁশিয়ারি  দিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়ের কটাক্ষ, ইস্যু নেই, তাই এসব ভয়ঙ্কর কথা বলছেন দিলীপ ঘোষ।
দিলীপ ঘোষ বলেছেন, রাজ্যে দলের শক্তি বেড়েছে। বিজেপির ৭৫ জন সদস্য বিধানসভায় আছেন। তাঁর দাবি, এত বড় জয় পেয়েও স্বস্তিতে নেই তৃণমূল। 
আজ বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের পোড়ামাটির হাটে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, বিধানসভা নির্বাচনে ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে। এত ভোট পেলে অন্য রাজ্যে সরকার গঠন করতে পারা যেত। বিধানসভায়  ৭৫ আসন আছে বিজেপির।  বিধানসভায় দমবন্ধ করে দেব। বাইরেও আন্দোলন করব মানুষের কষ্ট নিয়ে।  রাজ্যে  অত্যাচার, লুঠপাঠ শুরু হয়েছে।  সাধারণ মানুষ আতঙ্কে আছে। এতবড় জয় হল তৃণমূলের, কিন্তু কোনও বিজয় উৎসব নেই। মাংস ভাত রান্না করা থাকলেও কেউ খেতে আসেনি। কারণ, এই পাপের ধন কেউ খাবে না। বিজেপি সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে বিধানসভার ভেতরে ও বাইরে  আন্দোলন করবে। বিজেপি আদর্শবাদী দল। সারা ভারতে এভাবেই দল বেড়েছে। ৭০ বছর পর আমরা এই অবস্থায় আসতে পেরেছি। কর্মীদের পরিশ্রমের ফলেই তা হয়েছে। 
এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তাপস রায় বলেছেন, কোনও ইস্যু নেই। তাই এসব ভয়ঙ্কর কথাবার্তা বলছেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে রাজ্য নেতৃত্ব কোনও রাজনৈতিক কথা না বলে এসব ভয়ঙ্কর কথাবার্তা বলছন। আসলে গত সাত বছরে বিজেপি দেশে যে দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে, বাংলার মানুষ তা বুঝতে পেরে গত নির্বাচনে এর থেকে পরিত্রাণ চেয়েছেন। 
তাপস রায় আরও বলেছেন, দিলীপ ঘোষ সম্ভবত তাঁর পদ হারাতে চলেছেন। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ সব কথা বলছেন তিনি। 
আব কি বার, দোশো পার! বিধানসভা নির্বাচনে ২০০-র বেশি আসনে জয়ের দাবি তুলে ভোটের প্রচারে ঝড় তুলেছিল বিজেপি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে গৈরিক দলের। ২০১৯-র লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে চমকপ্রদ সাফল্য অর্জন করেছিল বিজেপি। তারপর থেকেই রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হয়ে ওঠে বিজেপি। সেইসঙ্গে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পেরেছিল বিজেপি। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বিধানসভা ভোটের প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ২০০-র বেশি আসন পেয়ে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করবে বলে দাবি করেছিলেন অমিত শাহ।  এই লক্ষ্যে রাজ্যে একের পর এক জনসভা, রোড শো করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। শুধু বিজেপির প্রাক্তন সভাপতিই নন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও একটার পর একটা জনসভা করেছেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত কাজের কাজ কিছু হয়নি। ৭৭ আসন পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বিজেপিকে। 
ভোটের পর ফলাফল নিয়ে দলের অন্দরে একে অপরকে দোষারোপের অভিযোগও সামনে এসেছে। সামনে এসেছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও। 
বিধানসভা ভোটে দলের ভরাডুবি প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতির দাবি, বুথ স্তরে সংগঠনকে পোক্ত করা যায়নি। এছাড়া, কর্মীদের অভিজ্ঞতা কম থাকায় বিধানসভা ভোটে খারাপ ফল হয়েছে। ভোটের ফল ঘোষণার দিন গণনা কেন্দ্র থেকে বিজেপি কর্মীরা ভয়ে পালিয়ে যাওয়াতেও কয়েকটি কেন্দ্রে হার হয়েছে বলে দাবি করেন দিলীপ ঘোষ।
পাশাপাশি, তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের দলে যোগদান হারের কারণ বলে মানতে চাননি বিজেপি রাজ্য সভাপতি। দল বড় করতে ওই নেতাদের নেওয়া হয়েছিল বলে তাঁর দাবি। 


এরইমধ্যে ভোটের আগে যাঁরা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই ফের পুরানো দলের পথেই পা বাড়িয়েছেন। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরতে চাওয়া নেতাদের সম্পর্কে দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, যারা সুবিধা ছাড়া থাকতে পারেন না, তাঁরাই ফিরে যেতে চাইছেন।