নয়াদিল্লি: একের পর এক বিতর্কে দলের তরফে দূরত্ব বাড়ানো হয়েছিল আগেই। এবার প্রত্যাহার করে নেওয়া তিনটি কৃষি আইন নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা থেকে সরে এলেন বিজেপি-র তারকা সাংসদ কঙ্গনা রানাউত। নিজের মন্তব্যের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করলেন তিনি।  কেউ আহত হয়ে থাকলে মন্তব্য প্রত্যাহার করছেন বলে জানালেন। (Kangana Ranaut)


অভিনয় থেকে রাজনীতিতে এসেও একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন কঙ্গনা। কৃষক আন্দোলনের জেরে প্রত্যাহার করে নেওয়া কেন্দ্রের তিনটি কৃষি আইন নিয়েও একদিন আগে বিতর্কিত মন্তব্য করেন তিনি। আইন তিনটি ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন, কৃষকদেরই আইন ফেরানোর দাবি জানানো উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। সেই নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে, বিজেপি জানিয়ে দেয়, কঙ্গনার এমন মন্তব্য করার এক্তিয়ারই নেই কঙ্গনার। দলের সঙ্গে তাঁর অবস্থান সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। (Kangana Ranaut Farm Laws Remarks)


এর পরই বুধবার সকালে নিজের মন্তব্যের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেন কঙ্গনা। জানান, দল ঠিকই বলেছে। তিনি ব্যক্তিগত মতামত জানিয়েছেন। দলের অবস্থান ব্য়ক্ত হয় না তাতে। এর পর ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে কঙ্গনা বলেন, "গত কয়েক দিনে কৃষি আইন নিয়ে কিছু প্রশ্ন করা হয় আমাকে। সেই প্রেক্ষিতে কৃষকদের আইন ফিরিয়ে আনার দাবি তোলার কথা বলেছিলাম আমি। আমার মন্তব্যে অনেকে অসন্তুষ্ট হয়েছেন। কৃষি আইন যখন পাস হয়, আমরা সকলে সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু সংবেদনশীলতার কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী আইন প্রত্যাহার করেন। ওঁর কথার গরিমা বজায় রাখাই আমাদের বিজেপি কর্মকর্তাদের কর্তব্য।"



এর পর মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন বলে জানান কঙ্গনা। তিনি বলেন, "আমারও মনে রাখা উচিত যে, আমি শুধু শিল্পী নই, বিজেপি-র কার্যকর্তাও। আমার নিজের কোনও ব্যক্তিগত মতামত জানানো উচিত নয়। দলের অবস্থানই আমার অবস্থান। আমার কথায়, চিন্তায় যদি কেউ আহত হয়ে থাকেন, আমি দুঃখিত। মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।"


একদিন আগে কঙ্গনা যদিও পরিষ্কার ভাষায় বলেন, "আমি জানি এটা নিয়ে বিতর্ক হবে। কিন্তু আমার মনে হয়, যে কৃষি আইনগুলি প্রত্যাহার করা হয়েছিল, সেগুলি ফিরিয়ে আনা উচিত। এ নিয়ে সরব হওয়া উচিত কৃষকদের নিজেদেরই। দেশের উন্নয়নের স্তম্ভ কৃষক সমাজ। আমি ওঁদের অনুরোধ করব, নিজেদের ভালর জন্যই কৃষি আইনগুলি ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।"


কঙ্গনার এই মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক শুরু হতে সময় লাগেনি। কংগ্রেসের তরফে কঙ্গনার মন্তব্যের ভিডিও পোস্ট করে তুলোধনা করা হয় বিজেপি-কে। দলের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনেত বলেন, "৭০০-র বেশি কৃষক শহিদ হন, তার পরই ঘুম ভাঙে মোদি সরকারের। কালো আইন তিনটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এখন বিজেপি সাংসদরা ওই আইন আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কংগ্রেস কৃষকদের পাশে আছে। নরেন্দ্র মোদি এবং ওঁর সাংসদরা যত চেষ্টাই করুন, ওই তিনটি কালো আইন কখনও ফিরবে না।" 


হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে এই মুহূর্তে চরম তৎপরতা বিজেপি-র অন্দরে। এই হরিয়ানা থেকেই ২০২০ সালে দিল্লি অভিমুখে কৃষকদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ওই তিন আইনের বিরুদ্ধে। সেই আন্দোলনের জেরেই শেষ পর্যন্ত বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় কেন্দ্র। হরিয়ানায় নির্বাচনের আগে কঙ্গনার মন্তব্যে তাই অস্বস্তি তৈরি হয় বিজেপি-র অন্দরেও। তাই তড়িঘড়ি কঙ্গনার সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় দল। এর পরই নিজের মন্তব্য প্রত্যাহার করলেন কঙ্গনা। তবে এই প্রথম নয়, 'ইমার্জেন্সি' ছবির প্রচারে কৃষক আন্দোলন নিয়ে মন্তব্য করে আগেই বিতর্ক বাধিয়েছেন কঙ্গনা। কৃষকদের ওই আন্দোলন বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি ডেকে আনছিল, আন্দোলনস্থলে মৃতদেহ ঝুলছিল, ধর্ষণের ঘটনা ঘটছিল বলে দাবি করেন তিনি। সেই নিয়ে দলের তরফে ভর্ৎসনাও করা হয় তাঁকে। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা কঙ্গনাকে ডেকেও পাঠান।