বুলধানা (মহারাষ্ট্র) : মাঝরাতে হাইওয়ের আশপাশে লোকজন কম থাকবে সেটা স্বাভাবিক। কাজেই, এই সময়ে দুর্ঘটনা ঘটা মানে সাহায্য পাওয়ার আশা কার্যত 'ক্ষীণ'। কিন্তু, দু'-চারজনের দেখাও মিলবে না তেমনটা নয়। কিন্তু, প্রশ্নটা উঠছে সদিচ্ছা নিয়ে। মহারাষ্ট্রের বুলধানায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর আক্ষেপের সুরে সেকথারই প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে স্থানীয়দের গলায়। তাঁরা বলছেন, রাস্তা দিয়ে পেরিয়ে যাওয়া গাড়ির মধ্যে কয়েকটাও যদি সেই সময় দাঁড়াত, তাহলে হয়তো এতগুলো প্রাণহানি হতো না ! ভয়ঙ্কর সেই আগুনের লেলিহান শিখা থেকে আরও কয়েকজনকে হয়তো বাঁচানো যেত। দুর্ঘটনায় যে ক'জন রক্ষে পেয়েছেন, তাঁদেরও বক্তব্য, দুর্ঘটনার পর তাঁরা সাহায্যের জন্য প্রার্থনা জানিয়েছিলেন অনেকের কাছেই। কিন্তু, কার্যত কেউই গাড়ি থামিয়ে এগিয়ে আসেনি।


মহারাষ্ট্রের বুলধানায় ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বাসের মধ্যেই পুড়ে মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। নাগপুর থেকে পুনে যাওয়ার পথে রাত দেড়টা নাগাদ ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে আগুন ধরে যায় একটি যাত্রীবাহী বাসে। তার জেরেই এতগুলো প্রাণহানি। মাঝরাতে দুর্ঘটনাটি ঘটে সমৃদ্ধি এক্সপ্রেসওয়েতে। দুর্ঘটনায় কোনও রকমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী মর্মান্তিক সেই ঘটনার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, হঠাৎই বাসের চাকা ফেটে যায়। সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটাতে আগুন ধরে যায়। এর জেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যাত্রীরা। গোটা বাসে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। গোটা বাসে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই সময় তিনি এবং তাঁর পাশে বসে থাকা অপর এক যাত্রী শক্তি সঞ্চয় করে রিয়ার উইন্ডো ভেঙে ফেলেন। মরিয়া চেষ্টায় আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বেরিয়ে আসেন তাঁরা। 


কিছুক্ষণের মধ্যে দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ ও দমকল। দুর্ঘটনায় যাঁরা বেঁচে গেছেন, তাঁদের বক্তব্য, অনেককে বাঁচানো যায়নি। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, 'বাসের চার-পাঁচ জন যাত্রী সৌভাগ্যবশত একটি জানালা ভেঙে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। বাকিরা তাঁদের দেখানো পথে বেরিয়ে আসতে পারেননি। আগুনের গোলার মধ্যেই আটকা পড়ে তাঁরা অগ্নিদগ্ধ হন।' সেই সময় বাস থেকে বেরিয়ে আসা যাত্রীরা, রাস্তা দিয়ে পেরিয়ে যাওয়া গাড়িগুলিকে দাঁড় করিয়ে সাহায্যের আহ্বান জানান, কিন্তু কার্যত কেউই থামেননি। বাঁচানো যায়নি অধিকাংশকেই। 


দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। তিনি শিহরণ জাগানো সেই ঘটনার কথা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, "বিশ্বাসঘাতক' এই রাস্তায় অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু, এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা আগে দেখিনি। দৃশ্যটি ছিল ভয়ানক। টায়ার ফেটে গিয়েছিল, ভিতরে থাকা লোকগুলো বাঁচার জন্য মরিয়া হয়ে জানালা ভাঙার চেষ্টা করছিলেন। দুঃখজনকভাবে, তাঁদের সব চেষ্টা বৃথা যায়। কারণ, ভয়ানক আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল যে কিছুই করা যায়নি। উপস্থিত লোকজন অসহায়ভাবে চোখে জল নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। পিমপালখুটার এই রাস্তায় অনেক দুর্ঘটনায় ঘটে। আমাদের সাহায্যের জন্য ডাকা হয়েছিল। আমরা ঘটনাস্থলে এসে এই ভয়ঙ্কর পরিণতি দেখি। চাকা ফেটে গিয়েছিল। বাসের ভেতরে থাকা মানুষগুলো জানালা ভেঙে ফেলতে চাইছিলেন। তাঁদের অগ্নিদগ্ধ হয়ে মরতে দেখি। আগুন এতটাই তীব্র ছিল যে আমরা কিছু করতে পারিনি। দাঁড়িয়ে শুধু চোখের জল ফেলা ছাড়া!"