কলকাতা: টাকা এবং উপহারের বিনিময়ে সংসদে গৌতম আদানিকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বলে অভিযোগ ছিলই। সংসদের নীতি কমিটিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন স্পিকার ওম বিড়লা। এবার তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিড়ম্বনা আরও বাড়ল। কারণ সরকারি সাক্ষী হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে হলফনামা জমা দিয়েছেন ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানি। তাঁর দাবি, আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন সাজানোর জন্য, তাঁকে নিজের সংসদীয় ইমেলআইডি এবং পাসওয়ার্ডও দিয়েছিলেন মহুয়া।
ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার বিজেপি (BJP) সাংসদ নিশিকান্ত দুবে সম্প্রতি মহুয়ার বিরুদ্ধে চিঠি লেখেন স্পিকারকে। তাঁর অভিযোগ ছিল, ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে টাকা এবং উপহারের বিনিময়ে মহুয়া লোকসভায় আদানি গোষ্ঠীকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। নিশিকান্তের দাবি ছিল, আদানি গোষ্ঠীকে বদনাম করতে হীরানন্দানি গ্রুপ থেকে ১ কোটি টাকা এবং দামি উপহার নিয়েছিলেন মহুয়া। বিষয়টি নিয়ে সিবিআই প্রধানকে চিঠি দেন মহুয়ার একসময়ের ঘনিষ্ঠ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনজীবী জয় অনন্ত দেহাদরাইও।
মহুয়া গোড়াতেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। এমনকি ব্যবসায়ী হারীনন্দানিও মহুয়াকে টাকা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। সংস্থার তরফে বিবৃতি দিয়ে বলে হয়, 'আমরা ব্যবসায় থেকে ব্যবসা করি, রাজনীতির ব্যবসা করি না। দেশের স্বার্থে এযাবৎ সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে এসেছি আমরা, আগামী দিনেও তা-ই করব'।
আরও পড়ুন: NaMo Bharat: RapidX থেকে রাতারাতি NaMo Bharat, উদ্বোধনের আগে নামবদল সেমি-হাইস্পিড ট্রেনের
কিন্তু বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হতেই সরকার পক্ষের সাক্ষী হয়ে গিয়েছেন হীরানন্দানি। আদালতে জমা দেওয়া হলফনামায় মহুয়াকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। জানিয়েছেন 'বেঙ্গল গ্লোবাল সামিটে' মহুয়ার সঙ্গে আলাপ তাঁর, তার পর বন্ধু হয়ে ওঠেন। দেশের বাইরেও একাধিক বার দেখা-সাক্ষাৎ হয়। কথা হয় ফোনেও। মহুয়াকে 'কর্তৃত্ববাদী', 'উচ্চাকাঙ্খী' বলেও উল্লেখ করেন হীরানন্দানি। তাঁকে দিয়ে মহুয়া অনেক কাজও করিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
হলফনামায় হীরানন্দানি জানান, সংসদে আদানিকে নিয়ে প্রশ্ন তুলতে তাঁর কাছ থেকে কিছু তথ্য চেয়েছিলেন মহুয়া। সেই মতো প্রশ্নমালা এবং তথ্যাদি জোগাড় করেন তিনি। এর পর মহুয়া তাঁকে নিজের সংসদীয় ইমেল আইডিই দিয়ে দেন, যাতে সরাসরি হীরানন্দানিই প্রশ্ন আপলোড করে দিতে পারেন। আদানি গোষ্ঠীর প্রাক্তন কর্মী, সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকেও মহুয়া এ ব্যাপারে সাহায্য় পান বলে দাবি করেছেন। দিল্লিতে নিজের বাংলো মেরামত, যাতায়াতের খরচ, বিদেশ সফরের ব্যবস্থাপনা থেকে দামি উপহারও তাঁর কাছ থেকে মহুয়া নিয়েছেন বলে দাবি হীরানন্দানির। মহুয়া বন্ধুত্বের ফায়দা তুলেছেন বলে অভিযোগ তাঁর।
মহুয়ার এককালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অনন্তও আদালতে অভিযোগ জানিয়েছেন যে, মহুয়া তাঁর পোষ্যকে চুরি করেছেন। বেআইনি ভাবে তাকে নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। এর আগে অনন্তকে 'দাগা খাওয়া প্রাক্তন' বলে উল্লেখ করেছিলেন মহুয়া। একসময় তাঁদের সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। তা ভেঙএ গেলে পোষ্যের উপর দাবি জানানো নিয়ে আইনি ঝামেলাও হয় বিস্তর।