নয়াদিল্লি: আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে দুর্নীতির অভিযোগকে হাতিয়ার করে লাগাতার বিরোধীদের আক্রমণ করে চলেছে কেন্দ্র। সেই আবহে এবার কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট ঘিরে তরজা (CAG Report)। কেন্দ্রীয় সরকার কোন খাতে কত টাকা খরচ হচ্ছে, সব কিছু নিয়ম মেনে হচ্ছে কিনা, সেই সংক্রান্ত হিসেব-নিকেশ রাখে CAG. তাদের রিপোর্টকে সামনে রেখেই নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে একযোগে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। (Corruption Allegations)
কংগ্রেসের তরফে CAG রিপোর্টের নথি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, হাইওয়ে প্রকল্পের বরাত দেওয়া থেকে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় টাকা মঞ্জুর হওয়ায় বিস্তর গরমিলের অভিযোগ তোলা হয়েছে। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের ভারতমালা পরিযোজনা প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে দ্বারকা এক্সপ্রেসওের নির্মাণে প্রয়োজনের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি টাকা খরচ হয়েছে বলে উঠে এসেছে CAG রিপোর্টে।
CAG রিপোর্ট অনুযায়ী, ৪৮ নং জাতীয় সড়ককে যানজটমুক্ত করতে, দিল্লি এবং গুরুগ্রামের মধ্যে ২০১৭ সালে ১৪টি লেন বিশিষ্ট জাতীয় সড়ক নির্মাণে অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থনীতি বিষয়ক কমিটি। সেই সময় প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ১১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচ পড়বে বলে অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতি কিলোমিটারে ২৫০ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা খরচ পড়েছে বলে দেখানো হয়। শুধু তাই নয়, হরিয়ানার যেখানে ১৪টি লেন গড়ার কথা ছিল, সেখানে মাত্র আটটি লেন বিশিষ্ট এক্সপ্রেসওয়েই গড়ে তোলা হয়, তার সপক্ষে কোনও ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি।
বিষয়টি সামনে আসার পর কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রকের তরফে ব্যাখ্য়া দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, আটটি লেনকে উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে, তার উপর গড়া হয়েছে করিডর। তার জন্যই খরচ বেশি পড়েছে। কিন্তু সেই খরচ ১৮ কোটি প্রতি কিলোমিটারের হিসেবে ৫২৮.৮ কোটির পরিবর্তে, একধাক্কায় প্রতি কিলোমিটারে ২৫০ কোটিতে পৌঁছল কী করে, মাত্র ২৯.০৬ কিলোমিটার রাস্তা তৈরিতে ৭, ২৮৭.২৯ কোটি টাকা খরচ হল কী করে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে CAG, প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরাও।
খরচ-খরচা, বরাত সংক্রান্ত বিশদ তথ্য না দিয়েই দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অনুমোদন দেওয়া হয় বলেও উঠে এসেছে CAG রিপোর্টে। ১৪ লেন বিশিষ্ট সড়ক গড়া হবে বলে যেখানে অনুমোদন আদায় করা হয়েছিল কেন্দ্রের কাছ থেকে, তা পাল্টে গিয়ে আট লেন বিশিষ্ট উঁচু সড়ক এবং ছয় লেন বিশিষ্ট নীচু সড়ক তৈরির সিদ্ধান্ত কে নিলেন, কাকে জানালেন, তাতে প্রতি কিলোমিটারে ২৫০ কোটি খরচ হল কী করে, তা-ও জানতে চায় CAG. বর্তমানে যে হারে টোল নেওয়া হয়, তাতে এই খরচ পোষাবে না, আর টোল বাড়াতে গেলে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে মোটা গচ্চা যাবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে সেই নিয়ে কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করেন। তাঁর বক্তব্য, "হাইওয়ের নামে গোটা দেশকে রসাতলে নিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র। বিরোধীদের আক্রমণ করার আগে নিজের সরকারের দিকে নজর দেওয়া উচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির।" দলের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ সোমবার বলেন, "আগামী কাল লালকেল্লা থেকে শেষ বারের মতো ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে বলবেন প্রধানমন্ত্রী, গত সপ্তাহে সংসদে ঠিক যেমনটি করেছিলেন। কিন্তু নিজের সরকার এবং মন্ত্রীদের প্রশ্ন করার সাহস আছে কি ওঁর? "
CAG রিপোর্ট নিয়ে কেন্দ্রকে তীব্র বিঁধেছে আম আদমি পার্টিও। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতে, দুর্নীতির সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে মোদি সরকার। ট্যুইটারে (অধুনা X) তিনি লেখেন, 'গত ৭৫ বছরের যাবতীয় দুর্নীতির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে মোদি সরকার'। সব মিলিয়ে ৭.৫ লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ আপ-এর।
এর পাশাপাশি, আয়ুষ্মান ভারতেও বিস্তর গরমিল চোখে পড়েছে। CAG রিপোর্টে বলা হয়েছে, চিকিৎসাজনিত খরচ বাবদ কত মানুষ অর্থসাহায্য পেয়েছেন, তার হিসেব জমা দেওয়া হয়। কিন্তু তা ঘাঁটতে গিয়ে দেখা যায়, ৭ লক্ষ ৫০ হাজার গ্রাহকের ফোন নম্বর হিসেবে উল্লেখ রয়েছে একটি মাত্র নম্বরই, ৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯, বাস্তবে এই ফোন নম্বরটির অস্তিত্বই নেই। মাত্র চারটি আধারকার্ডের নম্বর দিয়ে নাম নথিভুক্ত করা হয় ৪ হাজার ৭৬১ জন গ্রাহকের। এমন ৪০৩ জনকে ১.১ কোটি টাকা অর্থসাহায্য দেওয়া হয়েছে বলে হিসেব দেওয়া হয়েছে, ঢের আগেই মৃত্যু হয়েছে যাঁদের। CAG-এর রিপোর্ট ঘিরেই এই মুহূর্তে উত্তাল জাতীয় রাজনীতি।