কলকাতা: 'ডার্লিং'- সিনেমা-সিরিজে বহুল ব্যবহৃত এই শব্দবন্ধ। চলতি ভাষায় বিভিন্ন সময়ে অনেকেই লঘু অর্থে এর ব্য়বহার করেন। কিন্তু কোনও ব্যক্তি অপরিচিত কোনও মহিলাকে সম্বোধনের সময় এই শব্দ ব্য়বহার করলে তা ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুয়ায়ী অপরাধের সামিল- এই মামলায় রায়ে এমনটাই উল্লেখ করল কলকাতা হাইকোর্টের পোর্ট ব্লেয়ার সার্কিট বেঞ্চ (Calcutta High Court Circuit Bench)। এক মহিলা কনস্টেবলের উদ্দেশে এই 'শব্দবন্ধ' ব্যবহার করেছিলেন এক ব্যক্তি। সেই সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর সিঙ্গল বেঞ্চ এমন পর্যবেক্ষণ রেখেছে এবং অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।


কী মামলা?
মামলাটি হল Janak Ram vs State- (Case no: CRR 29 of 2023)


এই মামলায় বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি ওই মহিলা কনস্টেবলকে যা বলেছিলেন, তার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, 'কী ডার্লিং চালান করতে এসেছো না কি?' আরও অভিযোগ, এমন ব্যবহার করার সময় অভিযুক্ত মদ্যপ ছিলেন। এই ব্য়বহার ওই মহিলার সম্ভ্রমহানি করেছে এবং যৌনগন্ধী মন্তব্য বলে অভিযোগ ছিল।


এই ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির (Indian Penal Code) সেকশন 354A এবং সেকশন 509-এর অধীনে মামলা হয়। যার মূল অভিযোগ ছিল যৌনগন্ধী (Sexually Coloured Remark) মন্তব্য করা এবং নারীর শ্লীলতাহানি করা। নিম্ন আদালত এই ঘটনায় অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে তিন মাসের জেল এবং জরিমানার নির্দেশ দেয়। 


কী ঘটেছিল?
অভিযোগ ছিল, দুর্গাপুজোর সময় পুলিশ খবর পায় একটি এলাকায় এক ব্যক্তি সমস্যা তৈরি করছে। খবর পেয়েই সেই এলাকায় যায় পুলিশ। সেখানেই ওই অভিযুক্ত মহিলা কনস্টেবলকে দেখে ওই উক্তি করেন বলে অভিযোগ।


মামলার সময় অভিযুক্ত পক্ষের তরফে দাবি করা হয়, এই উক্তি মজা করা হয়ে থাকলে তা মজা করেই করা হয়েছিল। এমনকী ওই এলাকায় অন্ধকার ছিল, আদৌ এমন ঘটনা হয়েছে কিনা সেই প্রশ্নও তোলা হয়। 


পরে আরও সওয়াল করা হয়, ওই শব্দবন্ধ অপ্রীতিকর বা যৌনগন্ধী নয়। এমন শব্দ চলতি ভাবে সিনেমা-টিভিতে ব্য়বহার করা হয়। এর সঙ্গে যৌন ইঙ্গিতের কোনও সম্পর্ক নেই।  অভিযুক্ত পক্ষের তরফে আরও সওয়াল করা হয় যে যদি এটা মেনেও নেওয়া হয় যে এই উক্তি যৌনগন্ধী তাহলেও সেকশন 509- লাগু হতে পারে না কারণ এই উক্তি ওই মহিলার সম্ভ্রমহানির লক্ষ্য নিয়ে করা হয়নি।


পাল্টা পুলিশের তরফে দাবি করা হয় নিম্ন আদালত ঠিক রায় দিয়েছেন কারণ ওরকম উক্তি যথেষ্ট আপত্তিজনক এবং এই উক্তি করার কোনও কারণই ছিল না।


সওয়াল-জবাব শেষে আদালত রায় দেয় যে এই উক্তি করে ওই ব্যক্তি অপরাধ করেছেন, তিনি মদ্যপ অবস্থায় থাকলেও এটি অপরাধ হয়েছে। তবে এও বলা হয়েছে যে যেহেতু ওই উক্তি করে অভিযুক্ত থেমে গিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে আর কিছু করেননি তাই নিম্ন আদালতের দেওয়া শাস্তির মাত্রা কমিয়ে ১ মাসের জেলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


কী পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের পোর্ট ব্লেয়ার সার্কিট বেঞ্চের?
রাস্তায় কোনও পুরুষ, (তিনি মদ্যপ হোন বা না হোন) কোনও অপরিচিত মহিলাকে (তিনি পুলিশ কনস্টেবল হোক না না হোক) ডার্লিং বলে সম্বোধন করলে তা আপত্তিজনক, যৌনগন্ধী। অপরিচিত মহিলার প্রতি এমন ব্য়বহার আদতে শ্লীলতাহানির চেষ্টা। ভারতীয় সমাজে যা মানদণ্ড রয়েছে তার ভিত্তিতে কোনও ব্যক্তি রাস্তাঘাটে কোনও অপরিচিত মহিলার প্রতি এমন উক্তি ব্যবহার করতে পারেন না। 


আরও পড়ুন: 'মোদি হিন্দু নন...', পটনার সভা থেকে বেনজির তোপ লালুর