কলকাতা: রবিবারের সন্ধ্যা। গিরিশ পার্ক থেকে শোভাবাজার যেতে বাঁ হাতে পেট্রোল পাম্পের গা ঘেষে অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট থেকে মসজিদ বাড়ি লেন পর্যন্ত, সে যেন ফাঁকা এক প্রান্তর। ধু ধু করছে। আর পাঁচটা দিনে যে চত্বরে মৌমাছির চাকের মতো মানুষের ভিড় থাকে, এদিন সেখানে কার্যত শ্মশানের শূন্যতা। ২০ হাজার খদ্দের প্রতিনিয়ত সোনাগাছিতে আসে। রবিবার সংখ্যাটা আরও বাড়ে। তবে দোল, হোলির পর থেকেই মানুষের আনাগোনা কমেছে। দিনে ৫০০ লোকও এখন এশিয়ার সবথেকে বড় যৌনপল্লীতে আসছে না। কারণ একটাই, ভয়। করোনাভাইরাসের ভয়।
দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির সেক্রেটারি কাজল বোস তাঁদের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে বলছেন, “প্রতিদিন সোনাগাছি যেমন থাকে, আজ সেই চেহারাটা নেই। হোলি থেকেই সোনাগাছিতে খদ্দের কমেছে। সোনাগাছি প্রতিদিন অন্তত ২০ হাজার খদ্দেরকে পরিষেবা দেয়। করোনাভাইরাসের ভয়ে মানুষের আনাগোনা কমেছে। গড়ে ৫০০ জনও এখন আসছে না।” সমন্বয়ের আরও এক সদস্য বৈশাখী লস্করও করোনা উদ্বেগের কথা জানিয়ে বলেন, শুধু খদ্দেররাই নয়, ভয় থেকেই সোনাগাছিতে আসছে না কর্মীরাও। “জেলা, গ্রামগঞ্জ থেকে সোনাগাছিতে অন্তত ১২ হাজার মহিলা ‘সেক্স ওয়ার্কার’ কাজ করতে আসে। করোনা আতঙ্ক যত বাড়ছে, তাঁরাও আর আসছে না। এখন মেরেকেটে ১০ শতাংশ হয়ত পেট চালাতে ব্যবসা করতে আসছেন”, মন্তব্য বৈশাখীর। শুধু সোনাগাছিই নয়, করোনা আতঙ্কে ব্যবসায় টান পড়েছে শেওড়াফুলি, ডোমজুড়, উলুবেড়িয়া, কালনা, শান্তিপুর, দিনহাটা, পঞ্জিপাড়া ও কোচবিহারেও।
এই অবস্থায় চিন্তা বাড়ছে যৌনপল্লীর কর্মীদের। বাড়ি ভাড়া, সংসার, পরিবার, বাচ্চাকাচ্চা, তাদের পড়াশুনা, রোজগার হবে কোন পথে? শঙ্কিত যৌনকর্মীরা। যে পথে যেখানে দিনে অন্তত চারটে খদ্দের পাওয়াই যেত, এখন একটাও জুটছে না। করোনার থেকেও তাঁরা এখন বেশি আতঙ্কে জীবিকা নিয়ে। গড়িয়া এলাকার সীমা যেমন বলছেন, “পরিস্থিতি প্রতিকূল। করোনার ভয়ে কোনও খদ্দেরই এই মুখো হচ্ছে না।”
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় তাঁরা নিজেরা কী পন্থা নিয়েছেন। সীমা জানালেন, তাঁরা স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেন। খদ্দেররা কাশি, জ্বর নিয়ে এলে যথা সম্ভব দূর থেকে কথা বলছেন তাঁরা। তবে তিনি এটাও জানালেন, যেহেতু খদ্দের বাছাই করার বিলাসিতা তাঁদের নেই, তাই মুখের ওপর ‘না’-ও করতে পারছেন না তাঁরা। একই বক্তব্য খিদিরপুরের যৌনকর্মী সঙ্গীতা খানেরও। একরাশ হতাশা মুখে তিনি বলেন, “করোনা আমাদের জীবন সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে।”