নয়াদিল্লি: সেনাকর্মী এবং আধা সামরিক বাহিনীতে যে হারে আত্মহত্যা, অপরাধের ঘটনা বাড়ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।  দেশের সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীতে কর্মরত জওয়ানদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে রিপোর্ট তলব করা হয়েছিল, কী কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেই নিয়ে পর্যালোচনার মধ্যেই এবার ভয়ঙ্কর তথ্য পেশ করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে আধা সামরিক বাহিনী, সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্সেস (CAPF), ন্যাশনাল সিকিওরিডি গার্ডস (NSG) এবং অসম রাইফেলসের (AR) ৭৩০ জন জওয়ান আত্মঘাতী হয়েছেন। হয় চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন, নয়ত বা স্বেচ্ছাবসর নিয়ে নিয়েছেন ৫৫ হাজার ৫৫৫ জন জওয়ান। (Mental Health in Armed Forces)


জওয়ানদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বৃদ্ধি নিয়ে লাগাতার প্রশ্ন উঠছিল। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দীর্ঘ সময় ধরে ডিউটি এবং অনিদ্রাকে এর জন্য দায়ী করছিলেন অনেকে। সেই নিয়ে রাজ্যসভায় প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে পরিসংখ্যান তুলে ধরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। লিখিত জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানান, ২০২০ সালে CAPF, NSG, AR থেকে ১৪৪ জন, ২০২১ সালে ১৫৭ জন, ২০২২ সালে ১৩৮ জন, ২০২৩ সালে ১৫৭ জন এবং ২০২৪ সালে এখনও পর্যন্ত ১৩৪ জন জওয়ান আত্মঘাতী হয়েছেন। গত পাঁচ বছরে তিন বাহিনী থেকে ৪৭ হাজার ৮৯১ জন স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন, চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন ৭ হাজার ৬৬৪ জন। (Central Armed Police Forces)


কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, CAPF-এ সাধারণত আট ঘণ্টার শিফ্ট হয়। কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী তাতে রদবদল ঘটে। জওয়ানরা যাতে ছুটি পান, প্রয়োজনীয় বিশ্রাম পান, সেই নিয়ে পদক্ষেপ করা হয়েছে। ১০০ দিনের ছুটির প্রকল্প আনা হয়েছে, যাতে পরিবারের সঙ্গে অন্তত ১০০ দিন কাটাতে পারেন জওয়ানরা। ইতিমধ্যেই ৪২ হাজার ৭৯৭ জওয়ান ১০০ দিনের ছুটি গ্রহণ করেছেন। এবছর অক্টোবর পর্যন্ত ৬ হাজার ৩০২ জওয়ান ১০০ দিনের ছুটি নেন।  ২০২৩ সালে ৮ হাজার ৬৩৬ এবং ২০২১ সালে ৭ হাজার ৮৬৪ জন জওয়ান ১০০ দিনের ছুটিতে বাড়ি যান পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে। পাশাপাশি, জওয়ানরা যাতে আত্মহত্যার রাস্তা না বেছে নেন, হতাশা, ক্ষোভ থেকে সহকর্মীকে আক্রমণ করে না বসেন, তার জন্য CAPF, AR-এ কর্মরতদের মানসিক চিকিৎসাও শুরু হয়েছে। রোজ তাঁদের সঙ্গে কথা বলা হয়, সুবিধা-অসুবিধা জানতে চাওয়া হয়, বিশ্রাম করতে দেওয়া হয় তাঁদের। 


পেশাগত জীবনের হতাশা থেকে জওয়ানরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন কি না, এই প্রশ্ন আজকের নয়। যদিও কেন্দ্রের দাবি, ব্যক্তিগত জীবনে অশান্তির জেরেই অধিকাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রের দাবি, পরিবারে কারও মৃত্যু, দাম্পত্যে অশান্তি, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, ছেলেমেয়েকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে না পারার জ্বালা, মানসিক চাপ  থেকেই অধিকাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। 


একের পর এক জওয়ানের আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই কাটাছেঁড়া চলছে। সম্প্রতি ওড়িশার মানবাধিকার কর্মী তথা আইনজীবী রাধাকান্ত ত্রিপাঠী সেই নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। সেনা, আধা সামরিক বাহিনীতে কর্মরত জওয়ানরা মানসিক এবং শারীরিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে চরম পদক্ষেপ করছেন বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত এবং পশ্চিমবঙ্গের কিছু ঘটনা আদালতে তুলে ধরা হয়।  সেনাকর্মী এবং জওয়ানদের মানসিক সুস্থতার জন্য কী পদক্ষেপ করছে সরকার, বিশদ তথ্য প্রকাশের দাবি জানান তিনি। বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও। তার পরই সংসদে কেন্দ্র এই তথ্য পেশ করল।