লাহৌর: ধুঁকছে দেশের অর্থনীতি। খাদ্যপণ্যের জন্য হাহাকার চারিদিকে। তার মধ্যেই যুদ্ধ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বিপুল টাকা আয় করল পাকিস্তান। রাশিয়া বনাম ইউক্রেন যুদ্ধ (Russian Ukraine War) চলাকালীন গত বছর আমেরিকার দু’টি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে তারা, যার আওতায় ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের বরাত মেলে। ওই চুক্তি থেকেই পাকিস্তান ৩৬ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা আয় করেছে বলে জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা। (Pakistan Arms Deal)


আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, রাওয়ালপিণ্ডিতে পাক বায়ুসেনার ঘাঁটি নুর খান থেকে মোট পাঁচবার উড়তে দেখা গিয়েছে ব্রিটেনের কার্গো বিমানকে। সেই বিমান কখনও সাইপ্রাসে, কখনও আকরোতিরিতে কখনও আবার রোমানিয়ায় অবতরণ করে। তার পর ওই বিমান থেকে অস্ত্রশস্ত্র পৌঁছে যায় ইউক্রেনে।


নয় নয় করে দু’বছর হতে চলেছে রাশিয়া বনাম ইউক্রেন যুদ্ধের। আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো একাধিক শক্তিধর রাষ্ট্র এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে অস্ত্রশস্ত্র জুগিয়ে সাহায্য করছে যেমন, তেমনই নৈতিক ভাবেও ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে তারা। অন্য দিকে, চিন আবার রাশিয়াকে সমর্থন করছে। বরাবরই ভারতের বন্ধু থেকেছে রাশিয়া। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মূলত নিরপেক্ষ অবস্থানই নিয়েছে ভারত।   


আরও পড়ুন: Israel Palestine War: বিদ্যুৎ-জল বন্ধ, চারিদিকে মোতায়েন স্নাইপার, সাঁজোয়া, গাজায় হাসপাতালের মধ্যেই গণকবর


সেই আবহে পাকিস্তান থেকে ইউক্রেনে অস্ত্র পৌঁছচ্ছে বলে খবর মেলে অনেক আগেই। যদিও বরাবর সেই দাবি খারিজ করে আসছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু এবার আমেরিকার ফেটারেল প্রোকিওরমেন্ট ডেটা সিস্টেম থেকে প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরে পাকিস্তান থেকে ব্রিটেনে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি সামনে এনেছে বিবিসি উর্দু। বলা হয়েছে, ১৫৫ মিলিমিটার রেঞ্জের শেল বিক্রি নিয়ে ‘গ্লোবাল মিলিটারি’ এবং ‘নরথ্রপ গানম্যান’ নামের দুই সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয় পাকিস্তানের।  


গত বছর ১৭ অগাস্ট দু’টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় বলে জানা গিয়েছে। পাক বিদেশমন্ত্রক যদিও এই দাবি খারিজ করে দিয়েছে। তাদের দাবি, রাশিয়া বনাম ইউক্রেন যুদ্ধে ইসলামাবাদের অবস্থান নিরপেক্ষ। দীর্ঘদিন ধরেই এই অবস্থান বজায় রেখেছে তারা। কোনও পক্ষকেই অস্ত্র সরবরাহ করা হয়নি তাদের দেশ থেকে।


কিন্তু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গতবছর এপ্রিল মাসে ইমরান খানকে মসনদ থেকে হটাতে বিরোধী যখন ‘পাকিস্তান ডেমোক্র্যাট মুভমেন্ট’ চলছিল, সেই সময়ই চুক্তিদু’টি স্বাক্ষরিত হয়। এর পুর ২০২২ সালে অবসরগ্রহণ করেন পাকিস্তানের তদানীন্তন সেনা প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, যিনি পাকিস্তান এবং ব্রিটেনের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করেছিলেন।


২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তার ঠিক আগে ইউক্রেনে হামলা চালানোর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে কার্যতই পুতিনকে সমর্থনের বার্তা দেন ইমরান। যদিও অগাস্ট মাসে সেই অবস্থানের বিপরীত সুর শোনা যায় বাজওয়ার গলায়। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির পক্ষে সওয়াল করেন তিনি। সেই সময়ই ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছিল বলে খবর।


জানা যাচ্ছে, ২০২২ সালের অগাস্ট মাসে রাওয়ালপিণ্ডিতে নামে ব্রিটিশ সেনার কার্গো বিমান। সেখান থেকে সাইপ্রাস হয়ে রোমানিয়া পৌঁছয়, যেটি কিনা ইউক্রেনের পড়শি দেশ। শুধু তাই নয়, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তানের ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষের রিপোর্টও বলছে, দেশ থেকে অস্ত্র রফতানির হার ৩০০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১-’২২ সালে যেখানে মাত্র ১ কোটি ৩০ লক্ষ ডলারের অস্ত্র রফতানি হয়েছিল, ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে তা বেড়ে ৪১ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার।


অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের সঙ্গে সেই সময় দরাদরি চলছি পাকিস্তানের। IMF থেকে ঋণ পেতে যাতে সুবিধা হয়, তার জন্যই পাকিস্তানকে অস্ত্র রফতানির ওই বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল বলেও দাবি উঠছে। যদিও তা খারিজ করে দিয়েছেন দেশের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালোচ। মিথ্যে অভিযোগ এনে পাকিস্তানকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁর।