নয়াদিল্লি: লাগাতার জাতি গণনার দাবি জানিয়ে আসছিলেন বিরোধীরা। কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী বিশেষ করে বার বার এই দাবিতে সরব হয়েছেন। বিরোধীদের সেই দাবিতেই এবার সিলমোহর দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের। জাতিগণনা দেশের আগামী জনগণনার অংশ হতে চলেছে বলে জানানো হল। দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে এই ঘোষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। (Caste Census)
মন্ত্রিসভার বৈঠকে কী কী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, তা নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। সেখানেই জনগণনায় জাতিগণনাকে যুক্ত করার কথা ঘোষণা করেন তিনি। অশ্বিনী বলেন, "মন্ত্রিসভার রাজনীতি বিষয়ক কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আগামী জনগণনার অংশ করা হবে জাতিগণনাকে।" (Population Census)
কেন্দ্রের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী জনগণনার অংশ হবে জাতিগণনা। অর্থাৎ দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে কোন জাতির সংখ্যা কত, কোন সম্প্রদায়ের মধ্য়ে কত উপজাতি রয়েছে, সেই সবকিছুর হিসেব থাকবে। আগামী বছর নাগাদ জনগণনার কাজ শুরু হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। আগামী বছর বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এই ঘোষণা করে কার্যতই চমক দিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।
এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বিহারে 'মহাজোট' থাকাকালীন কংগ্রেসের তদানীন্তন শরিক নীতিশ কুমার, লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের শরিক রাজ্যে জাতিগণনার ঘোষণা করেছিল। এমনকি বিহারই প্রথম রাজ্য, যারা সেই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছিল, যাতে দেখা যায়, বিহারের মোট জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশই অতি-অনগ্রসর শ্রেণির মানুষ। অনগ্রসর শ্রেণির মানুষ ২৭.১ শতাংশ, ১৯.৭ শতাংশ তফসিলি জাতি এবং ১.৭ শতাংশ তফসিলি উপজাতি।
আর ওই রিপোর্ট সামনে আসতেই গোটা দেশে জাতিগণনার দাবি জোরাল হতে থাকে। জাতিগণনা হলে বিজেপি-র মেরুকরণের রাজনীতি আর ধোপে টিকবে না বলে দাবি করেন রাহুল গাঁধী। গত কয়েক মাসে পশ্চিমবঙ্গেও উত্তাপ লাগাতার বাড়ছে। রাজ্যে মেরুকরণের রাজনীতি প্রকট হচ্ছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। সেই আবহে জাতিগণনার ঘোষণা রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিরোধীরা লাগাতার দাবি তুললেও, জাতিগণনার প্রশ্ন এযাবৎ এড়িয়ে যাচ্ছিল কেন্দ্র। কিন্তু এদিন ঘোষণা করতে গিয়ে কংগ্রেসকেই আক্রমণ করেন অশ্বিনী। পাশাপাশি, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন I.N.D.I.A জোটকেও আক্রমণ করেন তিনি। বলেন, "কংগ্রেসের সরকার বরাবরই জাতিগণনা এড়িয়ে এেসেছে। ২০১০ সালে মনমোহন সরকার বলেছিলেন, বিষয়টি মন্ত্রিসভায় ওঠা উচিত। মন্ত্রিদের নিয়ে একটি গোষ্ঠীও তৈরি করা হয়। প্রায় সব রাজনৈতিক দলই জাতিগণনাপ পক্ষে মত দেন। তার পরও কংগ্রেস সরকার জাতিগণনা করায়নি, শুধু জাতি সমীক্ষা করায়। বোঝাই যাচ্ছে, কংগ্রেস এবং I.N.D.I.A জোট জাতিগণনাকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সমীক্ষায় সমাজে ধন্দ তৈরি হয়। স্বচ্ছতা তৈরি করতে গণনা প্রয়োজন। তাই আজ মন্ত্রিসভা জনগণনায় জাতিগণনাকে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"
শেষবার ২০১১ সালে ভারতের জনগণনা হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী, ১৮৭২ সাল থেকে প্রতি ১০ বছর অন্তরই ভারতের জনগণনা হয়ে আসছে। কিন্তু কেন্দ্রের মোদি সরাকরের আমলে সেই ধারা বজায় থাকেনি। এর আগে, ২০২১ সালে জনগণনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিডের জেরে তা বাতিল করা হয়। ২০২৫ সালে জনগণনার কাজ শুরু হবে বলে পরে ঠিক হয়। আগামী জনগণনা ডিজিটাল নির্ভর হবে বলেও জানা যাচ্ছে।