নয়াদিল্লি: সরকার বিরোধী আন্দোলন চরমে উঠেছে। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি লাদাখে। সেই পরিস্থিতিতে এবার শিক্ষাবিদ তথা জলবায়ু কর্মী সোনম ওয়াংচুকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা CBI. নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বিদেশ থেকে আর্থিক অনুদান নেওয়ার পাশাপাশি, তাঁর পাকিস্তান সফর নিয়েও তদন্তে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাঁর সংস্থার বিদেশি অনুদানের লাইসেন্স বাতিল করেছে কেন্দ্র। (Ladakh Situation)
রাজ্যের স্বীকৃতির দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চলছে লাদাখে। একটানা অনশন চালিয়ে যাচ্ছিলেন খোদ সোনমও। একদিন আগে হঠাৎই সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হিংসাত্মক আকার ধারণ করে। লেহ্-তে বিজেপি-র দলীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। আগুন ধরানো হয় পুলিশের গাড়িতেও। খণ্ডযুদ্ধে প্রাণ হারান চার জন। আহত হন প্রায় ৭০ জন। (Sonam Wangchuk)
সোনম আন্দোলনকারীদের হিংসা থেকে বিরত থাকতে আর্জি জানালেও, পরিস্থিতি হিংসাত্মক হয়ে ওঠার জন্য তাঁর দিকেই আঙুল তুলেছে কেন্দ্র। অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বক্তব্য, ‘বারং বার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন সোনম ওয়াংচুক। আরব বসন্তের আদলে আন্দোলনের কথা বলে, নেপালের Gen Z আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে উস্কানি জুগিয়েছেন তিনি, মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন’।
সেই নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই সোনমের বিরুদ্ধে সক্রিয় হল CBI. তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, সোনমের সংস্থা Himalayan Institute of Alternatives Ladakh (HIAl)-এর আর্থিক অনুদান নিয়ে মাস দুয়েক আগেই তদন্ত শুরু হয়েছিল বলে যদিও দাবি করা হচ্ছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও এফআইআর দায়ের হয়নি। সোনম জানিয়েছেন, ১০ দিন আগে CBI-এর একটি দল তাঁর কাছে হাজির হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশ দেখিয়ে জানায়, বিদেশি অনুদান আইন লঙ্ঘিত হয়েছে।
সোনমের সংস্থা Himalayan Institute of Alternatives Ladakh-এর জন্য লাদাখে এর আগে জমি বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরের অগাস্ট মাসে লাদাখ প্রশাসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে। সেই সময়ই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। রাজ্যের স্বীকৃতির পাশাপাশি ষষ্ঠ তহবিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে সোনম যখন অনশন করছেন, সেই সময় তদন্ত শুরু করা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
শুধু তাই নয়, চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি সোনম কেন পাকিস্তান গিয়েছিলেন, তা নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই। যদিও সোনমের বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে বলা হয়েছে, অনুমোদন ছাড়াই বিদেশ থেকে অনুদান গ্রহণ করেছি আমরা। আমরা বিদেশি অনুদানের উপর নির্ভরশীল হতে চাই না। বরং নিজেদের জ্ঞান রফতানি করি আমরা, টাকা জোগাড় করি। এমন তিনটি ঘটনাকে বিদেশি অনুদান বলা হচ্ছে।”
১৯৯৮ সালের পর বুধবারই লাদাখের পরিস্থিতির সবচেয়ে অবনতি হয়। সরকার বিরোধী আন্দোলন হিংসাত্মক আকার ধারণ করে সেখানে। কেন্দ্র কেন প্রতিশ্রুতিপূরণে দেরি করছে, সেই প্রশ্ন তুলে বিজেপি-র কার্যালয় ঘেরাও করেন বিক্ষোভকারীরা। ব্যাপক ভাঙচুরও চালানো হয়। পুলিশের সঙ্গেও সংঘর্ষ বাধে তাঁদের। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের গাড়িতে। সংঘর্ষে চার জন প্রাণ হারান। গোটা ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন সোনম। জানান, তিনি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। যে বা যাঁরা হিংসা ঘটাচ্ছেন, তাঁরা লড়াইকে দুর্বল করে দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, সোনম জানান, দীর্ঘ দিন ধরে বঞ্চনার শিকার লাদাখ। তাই যুবসমাজের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, বিপ্লবের রাস্তায় নেমেছে Gen Z-রা। তাঁর এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে কেন্দ্র। বুধবার অশান্তির পর অনশনও প্রত্যাহার করে নেন সোনম।