নয়াদিল্লি: দেশে নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ঝুঁকি না নিয়ে চলতি লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করছে কেন্দ্র। ২৫ মার্চ শুরু হওয়া ২১ দিনের লকডাউন আজ ১৪ দিনে পড়ল। তার মেয়াদ রয়েছে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। এটা লকডাউনের তৃতীয় সপ্তাহ চলছে। এর মধ্যেই দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে এখনও পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৪৪২১। গতকালের পর আজ নতুন করে ৩৫৪ জনের মারণ ভাইরাস সংক্রমণের খবর এসেছে। মৃত্যু হয়েছে ১১৪ জনের। যদিও বেশ কিছু অসুস্থ মানুষ সুস্থ হয়েও উঠেছেন। কিন্তু লকডাউন তুলে নিলে সংক্রমণের বর্তমান চিত্রটা আরও খারাপ দিকে যদি মোড় নেয়, এই উদ্বেগ থেকেই কেন্দ্র ভাবছে লকডাউনের মেয়াদ আরও কিছুদিন বাড়ানো যায় কিনা। সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের খবর। ইতিমধ্যেই তেলঙ্গানা সমেত একাধিক রাজ্য কেন্দ্রকে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। রাজ্য সরকারগুলির কথা দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে কেন্দ্র। যদিও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব অগ্রবাল লকডাউন বাড়ানোর ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আইসিএমআরের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, একজন কোবিড ১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তি লকডাউন না মানলে, সোস্যাল ডিস্ট্যান্সিং পালন না করলে ৩০ দিনেই চারশোর বেশি মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারেন।

তিনটি রাজ্যে করোনাভাইরাস পজিটিভের সংখ্যা ৫০০ছাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে এই ভাইরাসের কবলে রয়েছে ৩১টি রাজ্য। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রের খবর, দেশে সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা মহারাষ্ট্রে। ৭৪৮। দ্বিতীয় স্থানে তামিলনাড়ু।সেখানে সংখ্যাটা ৬২১। তৃতীয় স্থানে রাজধানী দিল্লি। সেখানে করোনা পজিটিভ বেরিয়েছে ৫২৩ জন। করোনা সংক্রমণ ছড়ানো রোধে সোস্যাল ডিস্ট্যান্সিং কার্যকর করতেই চালু হয়েছিল ২১ দিনের লকডাউন। প্রত্যাশিত ফল পেতে তাই কেন্দ্র তার মেয়াদ বৃদ্ধির কথা ভাবছে। মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, অসম, ঝাড়খন্ড-তেলঙ্গানার পাশাপাশি এই রাজ্য়গুলিও জানিয়েছে, তারা চায়, ১৪ এপ্রিলের পরও আরও কিছুদিন লকডাউন চালু থাকুক। তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের পাশাপাশি ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, তাঁর চান, লকডাউন আরও চলুক। তেলঙ্গানায় করোনা পজিটিভ ৩২১ জন। বাঘেল তাঁর আশঙ্কার কথা জানিয়ে লিখেছেন, লকডাউন উঠে গেলে রেল,বিমান ও আন্তঃরাজ্য সড়ক পরিবহণ ফের চালু হলে তাঁদের রাজ্যে বাইরে থেকে করোনা পজিটিভ লোকজন ঢুকে পড়তে পারে। ত্রিপুরা, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশে একটি করে করোনাভাইরাস পজিটিভ হওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সূত্র সংবাদ সংস্থাকে বলেছে, বেশ কয়েকটি রাজ্যের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরাও লকডাউনের মেয়াদ বাড়াতে কেন্দ্রকে অনুরোধ করছে। সেটা মাথায় রেখেই ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। যদিও এ ব্য়াপারে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কিনা, জানায়নি সূত্রটি। গত সোমবার দেশবাসীকে করোনাভাইরাস অতিমারী মোকাবিলায় দীর্ঘকালীন যুদ্ধের জন্য তৈরি থাকার কথা বলেছেন, এই লড়াইয়ে দেশের জয় হবেই, এহেন প্রত্যয় প্রকাশ করে তাঁদের ক্লান্ত বা হতাশ না হওয়ার আবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাশাপাশি মন্ত্রিসভার সদস্য়দের ব্য়বসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান তৈরি করতেও বলেন তিনি, যার মধ্যে ধাপে ধাপে লকডাউন তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত আছে বলে অনেকের মনে হয়েছিল।