নয়াদিল্লি: সীমান্ত সংঘাত, সাগরে আধিপত্য-সহ একাধিক ইস্যুতে পরস্পরের মধ্যে বিরোধ। সেই নিয়ে মাঝে কিছুটা তাল কেটেছিল বটে, কিন্তু আবারও আগের সমীকরণই ফিরল। আমেরিকাকে ছাপিয়ে আরও একবার ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী দেশ হিসেবে উঠে এল চিন। ২০২৩-'২৪ অর্থবর্ষে দুই দেশের মধ্যে ১১৮.৪ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ১১ হাজার ৮৪০ কোটি ডলারের ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছ। (India-China Trade Relations)


আন্তর্জাতিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সংস্থা Global Trade Research Initiative (GTRI) যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতেই দু'বছরের ব্যবধানে আবারও আমেরিকাকে হারাল চিন, ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী দেশ হয়ে উঠল। এর আগে, ২০২১-'২২ এবং ২০২২-'২৩ অর্থবর্ষে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী দেশ হয়ে উঠেছিল আমেরিকা। ২০২০-'২১ সালে সেই জায়গা চিনের দখলেই ছিল। এবছর সেই অবস্থানেই ফিরল চিন। (India-China Relations)


GTRI রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩-'২৪ সালে ১১ হাজার ৮৪০ কোটি ডলারের ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছে ভারত এবং চিনের মধ্যে। এর মধ্যে চিন থেকে পণ্য আমদানি বেড়েছে ৩.২৪ শতাংশ। চিন থেকে ১০১.৭ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ১০ হাজার ১৭০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে ভারত। অন্য দিকে, ভারত থেকে চিনে পণ্য রফতানি বেড়েছে ৮.৭ শতাংশ। ভারত থেকে ১৬৬৭ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে চিন।


আরও পড়ুন: Dividend Stocks: এই সপ্তাহেই ডিভিডেন্ড মিলবে ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার স্টকে, তালিকায় আরও কিছু স্টক- কেনা আছে ?


২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারত থেকে চিনে পণ্য রফতানিতে পতন চোখে পড়ে। ভারত থেকে চিনে পণ্য রফতানির হার কমে ০.৬ শতাংশ হয়। ১৬৭৫ কোটি ডলার থেকে ১৬৬৬ কোটি ডলারে নেমে আসে রফতানিকৃত পণ্যের মূল্য। কিন্তু ওই একই সময়ে চিন থেকে ভারতে পণ্য আমদানি বেড়েছে বই কমেনি। চিন থেকে ভারতে পণ্য আমদানির হার বেড়েছে ৪৪.৭ শতাংশ। আগে ৭০৩২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হলেও তা ১০ হাজার কোটির কোটা ছাড়িয়ে গিয়েছে।


এই মুহূর্তে চিনের পর, আমেরিকা ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী দেশ। ২০২৩-'২৪ অর্থবর্ষে দুই দেশের মধ্যে ১১ হাজার ৮৩০ কোটি ডলারের ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছে। গত বছরে তুলনায় ভারত থেকে পণ্য রফতানিতে ১.৩২ শতাংশ পতন দেখা গিয়েছে এবার। আমেরিকা থেকে পণ্য আমদানিতেও ২০ শতাংশ পতন দেখা গিয়েছে। 


এমনিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে পড়শি দেশ চিনের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল ভারত। টেলিকম এবং স্মার্টফোন যন্ত্রাংশ থেকে ফার্মা এবং প্রযুক্তি সরঞ্জামও আমদানি করা হয় চিন থেকে। চিনের উপর এই নির্ভরশীলতা কমাতে কেন্দ্রের তরফে একাধিক পদক্ষেপও করা হয়। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, এবারও চিন থেকে ৪২০ কোটি ডলারের টেলিকম এবং স্মার্টফোন সরঞ্জাম আমদানি করেছে ভারত, যা এই ধরনের মোট সরঞ্জামআমদানির ৪৪ শতাংশ। চিন থেকে ৩৮০ কোটি ডলারের ল্যাপটপ এবং কম্পিউটার আমদানি করা হয়েছে। বিদেশ থেকে যত ল্যাপটপ এবং কম্পিউটার আমদানি করা হয় ভারতে, তার ৭৭.৭ শতাংশই চিন থেকে আসে।


এমনকি বিদ্যুৎচালিত গাড়ির যে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি, তাও চিন থেকে আমদানি করে ভারত। ২২০ কোটি ডলার মূল্যের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি চিন থেকে আমদানি করেছে ভারত, যা বিদেশ থেকে আমদানিকৃত মোট লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ চিনা প্রযুক্তির উপর ভারত এখনও নির্ভরশীল।  চিন এবং আমেরিকার পাশাপাশি, রাশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গেও ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়েছে ভারতের।