বেজিং: পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি থাকলেও, সেই কখনও ক্ষমতা জাহির করতে দেখা যায়নি তাদের। এই প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কথা জানাল ভারতের পড়শি দেশ চিন। বুধবার আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা করেছে তারা। উৎক্ষেপণের পর ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে পড়ে বলে জানা গিয়েছে। চিনের পরমাণু অস্ত্রের ভাণ্ডার নিয়ে উদ্বেগ দীর্ঘদিনের। এই ঘটনায় আরও চিন্তা বাড়ল আন্তর্জাতিক মহলের। (China Missile Launch)
চিনের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কথা স্বীকার করে নিয়েছে, যা এই প্রথম। বলা হয়েছে, পিপলস লিবারেশন আর্মির রকেট বাহিনী একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা করেছে। প্রতীকী ওয়ারহেড মাথায় বসিয়েই সেটি পরীক্ষা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। বুধবার সকাল ৮টা বেজে ৪৪ মিনিটে ক্ষেপণাস্ত্রটির উৎক্ষেপণ হয়। প্রত্যাশা অনুযায়ী, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে পড়েছে সেটি। (China Intercontinental Ballistic Missile)
চিন সরকার জানিয়েছে, বার্ষিক প্রশিক্ষণ প্রকল্পের আওতায় এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এটি একটি রুটিন প্রক্রিয়া। আন্তর্জাতিক আইন মেনেই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা কপা হয়েছে। কোনও দেশকে নিশানা রা হয়নি। South China Morning Post সরকারের প্রতিনিধিকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য সাধন হয়েছে। যাঁদের জানানো প্রয়োজন ছিল, সেই সমস্ত দেশকে এই পরীক্ষার কথা জানানো হয়েছিল। তবে কোথা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয়, কোন পথে সেটি প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে পড়ে, তা খোলসা করেনি চিন। তবে হাইনান দ্বীপ থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি পরীক্ষা করা হয় এবং সেটি প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে, ফরাসি পলিনেশিয়া দ্বীপের কাছে গিয়ে পড়ে বলে খবর উঠে আসছে।
পিপলস লিবারেশন আর্মির রকেট বিভাগ এই পরীক্ষা সম্পাদন করেছে বলে জানিয়েছে চিন সরকার। এই সংস্থাই চিনের যাবতীয় ক্ষেপণাস্ত্র, পরমাণু অস্ত্র তৈরির বিষয়টি সামলায়। চিনের পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডারের আধুনিকীকরণের দায়িত্বও তাদের হাতেই ন্যস্ত। আমেরিকাকে টেক্কা দেওয়াই মূল লক্ষ্য চিনের। সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে শত্রুদেশের উপর নজরদারি চালানো, আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির সমীকরণে রদবদল, সবকিছু তাদের নখদর্পণে।
তবে চিনের অন্য দেশের উপর নজরদারি চালালেও, নিজেদের শক্তি বরাবরই লোকচক্ষুর আড়ালে রেখে এসেছে চিন। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, পরমাণু অস্ত্র হোক বা সামগ্রিক অস্ত্রভাণ্ডার, চিনের আসল ক্ষমতা ঠিক কতটা, তা কেউ জানে না। তবে পরমাণু শক্তির ক্ষেত্রে যে ন্যূনতম প্রতিরোধের মাপকাঠি রয়েছে, তার চেয়ে চিন অনেক বেশি এগিয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হয়। যদিও চিন প্রথম অস্ত্র না ব্যবহারের নীতি নিয়েই চলে আসছে এযাবৎ। অর্থাৎ শত্রুপক্ষের তরফে হামলা না হলে, তারা প্রথমেই পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করবে না কারও উপর।
চিনের দাবি, দেশের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং নেতৃত্বাধীন সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনই একমাত্র পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত বিষয়ে নীতি নির্দেশ করে। পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে চিন রাখঢাক করছে বলে দাবি আমেরিকার। জুলাই মাসে আমেরিকার সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক ছিল তাদের। কিন্তু তাইওয়ানকে আমেরিকা অস্ত্র বেচছে জানতে পেরে, সেই বৈঠক থেকে পিছিয়ে আসে চিন।
গতবছর পেন্টাগনের তরফে চিনের অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে আনুমানিক একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়েছিল, চিনের কাছে ৫০০-র বেশি কর্মক্ষম ওয়ারহেড রয়েছে, যার মধ্যে ৩৫০টি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ২০২৩ সাল নাগাদ সেই সংখ্যা ১০০০-এ পৌঁছবে। ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণের ক্ষেপণাস্ত্র মজুত করতে গোপনে চিনা সেনা কয়েকশো সুড়ঙ্গ তৈরি করছে। আমেরিকা এবং রাশিয়ার হাতে যথাক্রমে ১৭৭০ এবং ১৭১০টি কর্মক্ষম ওয়ারহেড রয়েছে সেই নিরিখে। কিন্তু যে গতিতে চিন অস্ত্র বাড়িয়ে চলেছে, তাতে ২০৩০ নাগাদ তারা বাকিদের ছাপিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে পেন্টাগন।