নিউ ইয়র্ক : করোনা ভাইরাসের জন্য হটস্পট হতে পারে চিন-দক্ষিণপূর্ব এশিয়া। চিন, জাপান, থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্সে প্রভাব বাড়তে পারে ভাইরাসের। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য।


নেচার ফুড জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে নতুন এই গবেষণা। যেখানে বলা হয়েছে, বিশ্বে জমি ব্যবহারে পরিবর্তন, ক্রমাগত বনভূমি ধ্বংস ও  প্রাণীজ সম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধির ফলেই নতুন করে করোনা ভাইরাসের হটস্পট হতে পারে এই দেশগুলি। তবে সবথেকে চিন্তার কারণ চিনকে নিয়ে। দেশে মাংসের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে জীবিত পশু বা প্রাণীজ সম্পদের উৎপাদন বাড়িয়েছে চিন। গবেষণকরা বলছেন, সেই কারণে চিনেই সবথেকে বেশি হটস্পট হওয়ার সম্ভাবনা। 


সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের হটস্পট নিয়ে গবেষণা চালিয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে, পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি অফ মিলান ও ম্যাসে ইউনিভার্সিটি অফ নিউজিল্যান্ড-এর গবেষকদের দল। তারা জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসের হটস্পট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জাপান, উত্তর ফিলিপিন্স ও দক্ষিণ চিনে। এইসব অঞ্চলে বনভূমি টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার ফল ভুগতে হবে দেশবাসীকে। বনের বিন্যাস বদলে যাওয়ার ফলে হটস্পট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এইসব অঞ্চলে। প্রকৃতি ধ্বংস করে এইসব জায়গায় গড়ে উঠেছে বসতি। 


একই অবস্থা হবে থাইল্যান্ডের। লাইভস্টক প্রোডাকশন বা প্রাণীজ সম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধির ফল ভুগতে হতে পারে তাদের। এ প্রসঙ্গে ইউসি বার্কলে ইউনিভার্সিটির প্রফেসর পাওলো দি'ওদরিকো বলেন, ''জমির ব্যবহারে পরিবর্তন আসার ফলে আমাদের জীবনযাত্রা বদলে গিয়েছে। আমরা প্রকৃতিকে বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছি। যার ফলে মানব শরীরের ওপর প্রভাব পড়ছে। এরফলে 'জুনোটিক' রোগের শিকার হচ্ছি আমরা।''


বিশ্বের কোভিড পরিস্থিতি বলছে, এখনও SARS-CoV-2-এর উৎসের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই কারও। মনে করা হচ্ছে, 'হর্সশু ব্যাট' এক ধরনের বাদুরের মধ্যেই প্রথম এই ভাইরাস প্রবেশ করে। পরে সেখান থেকে মানুষের শরীরে আসতে পারে ওই ভাইরাস। এটা হতে পারে, সরাসরি মানুষের দেহে প্রবেশ না করে প্রথমে একটা মাধ্যম খুঁজেছে সেই ভাইরাস। এই ক্ষেত্রে মানব দেহে ঢোকার আগে প্যাঙ্গোলিনের দেহে প্রবেশ করেছে করোনা। এমনিতেই 'হর্সশু ব্যাটস' অনেক ধরনের করোনা ভাইরাস বহন করতে পারে। কোভিডের একাধিক ভ্যারিয়েন্ট বহন করতে সক্ষম এই প্রজাতির বাদুড়।


গবেষণার বিষয়ে দি'ওদরিকো বলেন, ''SARS-CoV-2-এর বন্যপ্রাণী থেকে মানব শরীরে সরাসরি প্রবেশের কোনও প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। তবে এটুকু বুঝতে অসুবিধা হয় না, জমির ব্যবহারের পরিবর্তনের ফলেই এখানে মানুষের বসতি গড়ে উঠেছে। ক্রমশ স্বাভাবিক বন্যপ্রাণ নষ্ট হয়েছে এইসব এলাকায়। তাই বাদুড়ের জায়গায় এখন মানুষের অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে।'' সেকারণে বাদুড় থেকে মানুষের মধ্যে এই সংক্রমণ ঘটবে বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।


গবেষকরা জানিয়েছেন, এই পরীক্ষার সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হর্সশু বাদুড়ের ওপর নজরদারি চালিয়েছেন তাঁরা। প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত এই বাদুড়ের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হয়েছে। পশ্চিমী ইউরোপ থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ঘুরেই পর্যবেক্ষণ চালিয়েছে গবেষক দল। তারপরই আসা হয়েছে সিদ্ধান্তে।