নয়াদিল্লি: বয়ঃসন্ধিকালে বাড়ছে যৌন অপরাধ। কৈশোরেই নাম উঠছে অপরাধের খাতায়। সেই নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্টও তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। কৈশোরে পারস্পরিক সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক হলে, তাকে অপরাধমুক্ত করার দাবি শোনা গিয়েছে বার বার (Consent)। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সম্মতিসূচক শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বয়সের মাপকাঠি কমিয়ে আনার পক্ষে সওয়াল করছেন অনেকে। সেই নিয়ে চাপ বাড়ছে ২২তম আইন কমিশনের উপর। শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় তারা, সেদিকেই তাকিয়ে সকলে। (POCSO Act)
এখনও পর্যন্ত যদিও কোনও ইঙ্গিতই দেয়নি ২২তম আইন কমিশন। তবে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, বয়স কমানোয় সায় নেই কমিশনের। যৌন অপরাধ থেকে শিশু সুরক্ষা আইনে সম্মতির ন্যূনতম বয়সের মাপকাঠি নিয়ে শীঘ্রই রিপোর্ট প্রকাশ করতে চলেছে কমিশন। তাতে এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কিনা সেদিকে তাকিয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কমিশনের তরফে তেমন কোনও ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি এখনও।
২০১২-এর আইন অনুযায়ী, পারস্পরিক সম্মতিতে যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ১৮ নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এমন হাজারো ঘটনা সামনে এসেছে, পারস্পরিক সম্মতিতে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলেও, শুধুমাত্র বয়সের কারণে গোটা বিষয়টি অপরাধের আওতায় চলে যাচ্ছে। তাই বয়সের মাপকাঠি নিয়ে পুনর্বিবেচনার অবকাশ রয়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তবে বয়সের মাপকাঠিতে কমানোর চেয়ে, এ নিয়ে সচেনতা বৃদ্ধির পক্ষে কমিশন। তাই POSCO আইনে যৌনশিক্ষা এবং সম্মতিসূচক যৌনসম্পর্ক নিয়ে স্কুলে পাঠ্যক্রম চালুর প্রস্তাব দিতে পারে কমিশন।
এর আগে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। কিশোর বয়সি দু'জন যদি পারস্পরিক সম্মতিতে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হয়, সেক্ষেত্রে বিষয়টি অপরাধের গোত্রে পড়ে কী করে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান তিনি। সংসদেও বিষয়টি আলোচনা করে দেখার প্রস্তাব দেন।
বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্টও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। ১৬ বছর বয়সি কোনও মেয়ে যদি ১৮ বছরের ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যায়, বিয়ে করে এবং সম্মতিক্রমে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়, সেক্ষেত্রে মেয়েটির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ছেলেটিকে POCSO আইনে গ্রেফতার করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
২০২২ সালে এনফোল্ড প্রোঅ্যাক্টিফ হেল্থ ট্রাস্ট এবং UNICEF-এর একটি রিপোর্টেও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে প্রেমের সম্পর্কে যত মামলা দায়ের হয়েছে POCSO আইনে, প্রতি চারটি মামলার মধ্যে একটিতে অন্তত পারস্পরিক সম্মতি ছিল দুই পক্ষেরই।
এ নিয়ে চলতি বছরের জুন মাসে আইন কমিশনের তরফে একটি বৈঠকও করা হয়। নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের আধিকারিকদের নিয়ে বিশদ আলোচনা হয় সেখানে। বর্তমান দিনে কিশোর বয়সিদের মধ্যে সমীকরণে যে বিস্তর পরিবর্তন এসেছে, তা মেনে নেন সকলেই। বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখার কথাও বলা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত বয়সের মাপকাঠি শিথিল করর পরিবর্তে, যৌন সম্পর্ক নিয়ে কিশোরবয়সিদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পথেই হাঁটতে পারে কমিশন।
এর আগে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে, পুরুষদের সমান ২১ বছর করার প্রস্তাবে অনুমোদন মেলে। সেই সময় লিঙ্গসাম্য়ের পক্ষেই সওয়াল করে কেন্দ্র। এতে অল্পবয়সে গর্ভবতী হয়ে পড়ার ঝুঁকি যেমন কমবে, তেমনই মেয়েরা মতামত জানানোর সুযোগ পাবেন। তাই বয়স কমানো আদৌ মেয়েদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে।