নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় সরকারের 'এক দেশ, এক ভোট' কমিটিতে থাকার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান (One Nation, One Election)। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে (Amit Shah) চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিলেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury)। চিঠিতে অধীর জানিয়েছেন, আগেই কমিটির সিদ্ধান্ত স্থির করে নেওয়ায়, তাঁর থাকার আর কোনও প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র আইওয়াশের জন্যই তাঁকে কমিটিতে রাখা হয়েছিল বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন অধীর। 


'এক দেশ, এক নির্বাচন' নীতি কার্যকর করা, তার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলি খতিয়ে দেখতে এবং তা নিয়ে পর্যালোচনা করতে শুক্রবার আট সদস্যের কমিটি গড়ে কেন্দ্র। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে ওই কমিটির মাথায় বসানো হয়। কমিটিতে রাখা হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর, কংগ্রেস ত্যাগী গোলাম নবী আজাদ, বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন IAS অফিসার এনকে সিংহ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ তথা লোকসভা সেক্রেট্যারিয়টের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সুভাষ কাশ্যপ, প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল হরিশ সালভে এবং সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনের প্রাক্তন কমিশনার সঞ্জয় কোঠারি।


অধীর ছাড়া কমিটির বাকি সদস্যরা কেন্দ্রীয় সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। তাই শুধু নামমাত্রই অধীরকে রাখা হয়েছিল বলে গোড়াতেই অভিযোগ ওঠে। সেই মর্মেই রবিবার শাহকে পাল্টা পত্রাঘাত করলেন অধীর। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে 'এক দেশ, এক নির্বাচন' নীতি কার্যকর করার প্রস্তাব রীতি মতো সন্দেহজনক বলেও চিঠিতে মন্তব্য করেছেন অধীর। রাজ্যসভায় বিরোধীদের দলনেতাকেই বা কেন কমিটিতে রাখা হল না প্রশ্ন তুলেছেন অধীর। তাঁর সাফ বক্তব্য, 'প্রত্যাশা মতো ফল যাতে আসে, তার সব বন্দোবস্তই করে রাখা হয়েছে কমিটিতে। তাই লোক দেখানোর আর কোনও প্রয়োজন নেই। ইচ্ছাকৃত ভাবেই সংসদীয় গণতন্ত্রের অবমাননা হচ্ছে। তাই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করা ছাড়া উপায় রইল না '।



আরও পড়ুন: One Nation, One Election: সরকার-ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে পরামর্শদাতা হিসেবে অধীরও, ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ নিয়ে বিশেষ কমিটি কেন্দ্রের


পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যেই সম্প্রতি ফের 'এক দেশ, এক নির্বাচন' নীতি কার্যকর করতে তৎপর হয়ে উঠেছে কেন্দ্র। তার জন্য সেপ্টেম্বরে সংসদের পাঁচ দিন ব্যাপী বিশেষ অধিবেশনও ডাকা হয়েছে। তার পর আট সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী যদিও বলেন, "আপাতত শুধু একটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে 'এক দেশ, এক নির্বাচন' নীতি নিয়ে পর্যালোচনা চলবে। ওই কমিটি যে রিপোর্ট জমা দেবে, তা জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে এবং সেই অনুযায়ী চলবে তর্ক-বিতর্ক চলবে। বিষয়টি আলোচনার জন্য তোলা হবে সংসদেও। এখনই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শুধুমাত্র আলোচনাই চলছে। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের জননী হিসেবে পরিচিতি আমাদের। গণতন্ত্রের জননীর বুকে বিবর্তন ঘটছে।"


কিন্তু 'এক দেশ, এক নির্বাচন' নীতি কার্যকর করতে সরকারের তরফে যে বিশেষ তৎপরতা রয়েছে, তা সরকারি বিজ্ঞপ্তিতেও স্পষ্ট। কারণ তাতে সাফ বলা হয়েছে, ওই কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল। অবিলম্বে ওই কমিটির বৈঠক শুরু হতে চলেছে এবং যত শীঘ্র সম্ভব সুপারিশ জানাতে বলা হয়েছে।


২০১৪ সালে ক্মষতায় আসার পর থেকে লাগাতার 'এক দেশ, এক নির্বাচন' নীতি কার্যকর করার পক্ষে সওয়াল করে আসছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে একাধিক বার তার সপক্ষে মুখ খুলেছেন। যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ থেকে সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং বিজেপি বিরোধী শিবিরের নেতারা বরাবর এই সুপারিশের বিরোধিতা করে আসছেন। 'এক দেশ, এক নির্বাচন'  নীতি কার্যকর করার নেপথ্যে আসলে বিজেপি-র রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে বলে মত বিরোধী শিবিরের নেতা থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের। তাঁদের মতে, মানুষকে বিভ্রান্ত করতে, কৌশলগত ভাবেই এই নীতির পক্ষে সওয়াল করছে মোদি সরকার এবং বিজেপি। এর মাধ্যমে স্থানীয় সমস্যাগুলি নিয়েও জাতীয়তাবাদী হিড়িক তুলতে চায় বিজেপি। জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে মোদিকে সামনে রেখে রাজ্য তথা পঞ্চায়েত স্তরের মানুষকেও প্রভাবিত করতে চায় তারা, যাতে এক ঢিলেই দুই পাখি মারা সম্ভব হয়। ২০১৪ সাল থেকে উত্তর ভারতে বিজেপি-র দৌরাত্ম্য চোখে পড়লেও, দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে একরকম ভাবে খাতাই খুলতে পারেনি বিজেপি। তাই সংবিধানে সংশোধন ঘটিয়ে, একবারে সর্বত্র ক্ষমতাদখলের স্বপ্ন দেখছে বিজেপি, এমন দাবিও করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।