নয়াদিল্লি: সুদূর ইতালি থেকে ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন পড়তে। সেই একটি সিদ্ধান্তই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল তাঁর। পশ্চিমি সংস্কৃতিতে বড় হওয়া মেয়ে এসে পড়েন ভারতে। দেশের প্রথম সারির রাজনৈতিক পরিবারের বধূ হয়ে এ দেশে পা রেখেছিলেন সনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi)। তার পর কখনও ইন্দিরা গান্ধীর বউমা, কখনও রাজীব গান্ধীর স্ত্রী, কখনও দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সভানেত্রী, কখনও আবার রাহুল এবং প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর মা, নানা ভূমিকায় এ যাবৎ তাঁকে দেখা গিয়েছে। প্রশংসা, সমালোচনা, অপপ্রচার, দীর্ঘ যাত্রাপথে সবকিছুরই মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে। তবুও দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন। কিন্তু ৭৬ বছর বয়সে পৌঁছে এ বার কি রাজনীতি থেকে অবসরের কথা ভাবছেন সনিয়া গান্ধী! শনিবার নিজেই সেই জল্পনা উস্কে দিলেন তিনি।


এ বার কি রাজনীতি থেকে অবসরের কথা ভাবছেন সনিয়া গান্ধী!


ছত্তীসগঢ়ের রাজধানী রাইপুরে কংগ্রেসের (Congress) পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন চলছে। দলের নেত্রী হিসেবে শনিবার, অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে সেখানে উপস্থিত ছিলেন সনিয়া।  প্রায় ১৫ হাজার কংগ্রেস কর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন তিনি। আর সেখানেই রাজনীতি থেকে অবসরের জল্পনা উস্কে দেন। ওই সভায় সনিয়া বলেন, "ভারত জোড়ো যাত্রা দিয়েই ইনিংস শেষ হল, এটাই আমার কাছে তৃপ্তির। এই যাত্রা আমনাদের সন্ধি ক্ষণে এনে ফেলেছে। এই যাত্রা প্রমাণ করে দিয়েছে, ভারতবাসী সর্বতো ভাবে সম্প্রীতি, সহিষ্ণুতা এবং সমানাধিকারের পক্ষে। এই যাত্রা দল এবং তৃণমূল স্তরের কর্মীদের মধ্যেকার কথোপকথনের রেওয়াজকে ফিরিয়ে আনল। বোঝাতে পারলাম, কংগ্রেস আজও মানুষে পাশে রয়েছে, আজও তাঁদের জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত।" (Bharat Jodo Yatra)


একের পর এক রাজ্যে পরাজয়, অন্তর্কলহে যখন জেরবার দল, সেই সময় গত বছরের শেষ দিকে কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত 'ভারত জোড়ো যাত্রা'য় নেতৃত্ব দেন রাহুল গান্ধী। সেই যাত্রাপতেও ছেলের পাশে দেখা গিয়েছিল সনিয়াকে। রাস্তায় হাঁটুগেড়ে বসে সনিয়ার জুতোর ফিতে বেঁধে দিয়েছিলেন রাহুল। সেই মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। তাই রাহুলের 'ভারত জোড়ো যাত্রা'র হাত ধরে যাত্রা শেষ করার কথা বলে সনিয়া আসলে রাজনীতিকে বিদায়ের ইঙ্গিতই দিলেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে এ নিয়ে কংগ্রেসের তরফে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কিছু হয়নি দুপুর পর্যন্ত। 


আরও পড়ুন: Yogi attacks Akhilesh : 'নিজের বাবাকেই সম্মান জানাতে পারনেনি', যোগীর নিশানায় অখিলেশ


তবে এ দিনের সভায় যাত্রা শেষের কথা বললেও, কংগ্রেস কর্মীদের অভিনন্দন জানান সনিয়া। বলেন, "যাত্রায় যাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তাঁদের সকলকে অভিনন্দন।- বিশেষ করে রাহুলজিকে, যাঁর সংকল্প এবং নেতৃত্ব যাত্রার সাফল্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।" এই মুহূর্তে দেশ চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে বলেও মন্তব্য করেন সনিয়া। তাঁর কথায়, "চ্য়ালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে আমরা। সময় অনুকুল নয়। প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) এবং বিজেপি-রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘের  শাসন একের পর এক প্রতিষ্ঠানের গলা চেপে ধেছে, ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক মূল্যবোধ।"


বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে বলেও এ দিন অভিযোগ করেন সনিয়া। তিনি বলেন, "নির্মম ভাবে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। বাছাই করা কিছু ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব দিতে গিয়ে, দেশের অর্থনীতিকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে মর্মভেদী বিষয় হল যে, ভারতীয়দের পরস্পরের মধ্যে ভীতি এবং ঘৃনার আগুন প্রজ্জ্বলিত করা হচ্ছে।  সংখ্যালঘুদের নিশানা করে এরা। সংখ্যালঘু, মহিলা, দলিত, আদিবাসীদের বিরুদ্ধে নিত্য ঘটে চলা অপরাধ এবং বৈষম্যমূলক আচরণকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এরা গান্ধীজিকে অপমান করেছিল। আজ কথায় এবং কাজে আমাদের সংবিধান এবং মূল্যবোধের অবমাননা করে চলেছে প্রতিনিয়ত।"


বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে বলেও এ দিন অভিযোগ করেন সনিয়া


সামনে কঠিন লড়াই, কিন্তু দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই সকলকে একজোট হয়ে এগিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেন সনিয়া। তাঁর মতে, কংগ্রেস যে কোনও রাজনৈতিক দল নয়। কংগ্রেসের কাঁধে ভর করেই স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ভারত। ভ্রাতৃত্ব, সমানাধিকার, ন্যায় আদায়ে লড়াইয়ে নেমেছিল। আগামী দিনেও লড়াই সহজ নয়। কিন্তু নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝেছেন, জয় আসবেই।