নয়াদিল্লি: আদানি গোষ্ঠীর (Adani Group Crisis) বিরুদ্ধে কারচুপি, জালিয়াতির ভূরি ভূরি অভিযোগ। অথচ তা নিয়ে নিশ্চুপ কেন্দ্রীয় সরকার। তা নিয়ে একযোগে সংসদে সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। কিন্তু প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পরিবর্তে জওহরলাল নেহরুকে (Jawaharlal Nehru) টেনে এনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যদি এতই মহান হন, তা হলে পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম তাঁর পদবী (Nehru Surname Row) ব্যবহারে লজ্জা পান কেন, তুলেছিলেন প্রশ্ন (Gandhi Family)। তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে। এ বার তাতে প্রতিক্রিয়া জানাল কংগ্রেস।
দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী মহান হন হলে বর্তমান প্রজন্ম তাঁর পদবী ব্যবহারে লজ্জা পান কেন, প্রশ্ন তোলেন মোদি
সংসদের বাজেট অধিবেশনে কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে ফের নেহরুকে টেনে আনেন মোদি। তা নিয়ে নেহরু-গান্ধী পরিবারের কেউ মুখ না খুললেও, কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা প্রতিক্রিয়া জানালেন। তাঁর বক্তব্য, "একমাত্র ঈশ্বরই এই দেশকে রক্ষা করতে পারেন। দায়িত্বশীল জায়গায় থাকা কোনও ব্যক্তি যদি ভারতের সংস্কৃতি না বোঝেন, এ ভাবে কথা বলেন...দেশের যে কোনও নাগরিককে জিজ্ঞেস করে দেখুন, মামারবাড়ির দাদুর পদবী ব্যবহার করেন? দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে এই প্রাথমিক ধারণাটুকু যদি না বোঝেন উনি, তাহলে একমাত্র ঈশ্বরই এই দেশকে রক্ষা করতে পারেন।"
সংসদের বাজেট অধিবেশন চলাকালীন আদানি প্রশ্নে কেন্দ্রকে কোণঠাসা করতে দেখা গিয়েছে বিরোধী দলগুলিকে। এর মধ্যে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে নিশানা করেন কংগ্রেস সাংসদ তথা জওহরলাল নেহরুর প্রপৌত্র রাহুল গান্ধী। কতবার মোদির সঙ্গে বিদেশ সফরে গিয়েছেন গৌতম আদানি, আদানির জন্য কেন ব্যবসায়িক এবং বিদশনীতিতে রদবদল ঘটানো হয়েছে, প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি। আদানি প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও, তা নিয়ে রাহুলকে নিশানা করতে ছাড়েননি মোদি।
সংসদে জবাবি ভাষণে কংগ্রেস এবং গান্ধী পরিবারকে নিশানা করেন মোদি। বলেন, "কোনও ভােব নেহরুর নাম উহ্য থেকে গেলে তেড়েফুঁড়ে ওঠেন কংগ্রেসের নেতাা। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আমাদের যদি ভুলচুক হয়ে থাকে, তিনি যদি এত মহানই হন...আমি বুঝি না, কেন ওঁর পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম নেহরু পদবী ব্যবহার করতে ভয় পান। নেহরু পদবী ব্যবহার করতে তকি লজ্জা পান? কেন লজ্জা পান? এত মহান ব্য়ক্তিকে নিজের পরিবারই যেখানে আপন করে নিতে নারাজ, সেখানে আমাদের নিয়েই প্রশ্ন কেন?"
রাহুল এবং গান্ধী পরিবারকে বিঁধতেই যদিও কৌশলে এই প্রশ্ন ছুড়ে দেন মোদি। কিন্তু তাঁর প্রশ্নের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কারণ নেহরু-গান্ধী পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম, যাঁরা রাজনীতিতে রয়েছেন, তাঁদের পদবী ব্যবহার না করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। জওহরলালের একমাত্র কন্যা ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। তাঁর বিয়ে হয় ফিরোজ গান্ধীর সঙ্গে। বিয়ের আগে নেহরু পদবী ব্যবহার করলেও, বিয়ের পর স্বামীর পদবীই লিখতে শুরু করেন ইন্দিরা, পিতৃতান্ত্রিক ভারতের সমাজ জীবনে যা স্বাভাবিক বলেই বিবেচিত হয় না শুধু, অলিখিত নিয়মও। সেই নিরিখে ইন্দিরার দুই ছেলে সঞ্জয় গান্ধী এবং রাজীব গান্ধীও বাবার পদবীই ব্যবহার করতেন, মামারবাড়ির দাদুর নয়। তাঁদের স্ত্রী সনিয়া এবং মেনকা গান্ধীও সেই রীতি মেনে চলেন। সন্তান আবার তাঁদের সন্তান রাহুল গান্ধী, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী এবং বরুণ গান্ধীও, জন্মসূত্র পাওয়া পদবী ব্য়বহার করেন। বিয়ের পর গান্ধী পদবীর সঙ্গে স্বামী রবার্টের বঢরা পদবী জুড়ে নিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা। তাঁর ছেলেমেয়েও বাবার পদবীই বেছেছেন, মায়ের গান্ধী পদবী নয়।
নেহরু পদবী নিয়ে আক্রমণে সমালোচনার মুখে পড়েছেন মোদি
তাই গান্ধী পরিবার তথা রাহুলকে আক্রমণ করতে বরাবরের মতো জওহরলালের উল্লেখ টেনে আনলেও, মোদির অভিযোগের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ তিনি নিজেও নামের সঙ্গে বাবা দামোদরদাসকে যুক্ত করেছেন, মা হীরাবেনকে নয়। অর্থাৎ ভারতীয় পিতৃতান্ত্রিক সমাজের রীতি পালন করে চলেছেন তিনিও। তাই জওহরলালকে টেনে এনে গান্ধীদের আক্রমণের পাশাপাশি মোদি আসলে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে অসম্মান করেছেন বলে মত বিরোধী শিবিরের।