পার্থপ্রতিম ঘোষ, ঝিলম করঞ্জাই ও অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা: দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া কামরাগুলো থেকে বের করে আনা হচ্ছে একের পর এক দেহ। আর তখনও, লাগাতার বেজে যাচ্ছে সেই দেহের সঙ্গে থাকা মোবাইলগুলো। ওপারে প্রিয়জনেদের একরাশ উৎকন্ঠা। জানা নেই, ফোন তোলবার মানুষটা হঠাৎ চলে গিয়েছেন চিরঘুমে। বালেশ্বর দুর্ঘটনা নতুন করে মনে করিয়ে দিয়ে গেল.. জীবন কী ভীষণ অনিশ্চিত।


বালেশ্বর যেন সাক্ষাৎ মৃত্য়ুপুরী। বাংলার ৮৬ জনের মৃতদেহ শনাক্ত করা গেলেও, এখনও অনেকের দেহ শনাক্ত হয়নি। মর্গে পরিচয়হীন মৃতদেহর স্তূপ। ভূবনেশ্বর এইমসে ১০০ জনের দেহ! মৃতদের ডিএনএ-র নমুনা সংরক্ষণ করে রাখা হচ্ছে। বিজনেস পার্কে চলছে দেহ শনাক্তকরণ। 


সারি সারি অসহায় মুখ, টেবিলের ওপর ঝুঁকে খুঁজে চলেছেন প্রিয়জনের ছবি। ভয়ঙ্কর ট্রেন দুর্ঘটনায় ছিন্নভিন্ন স্বজনের শরীর। বিপর্যয়ের অভিঘাতে বিকৃত মুখ! কান্নাভেজা ঝাপসা চোখে, প্রায় কালো ছবিতে প্রিয়জনকে চেনার চেষ্টা করছেন আত্মীয়-পরিজনরা! 


ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের দেহ রাখা হয়েছে বালেশ্বরের নসি বিজনেস পার্কে। একটি ঘরে রাখা হয়েছে মৃতদের ছবি। পাশে পার্টিসন করে শোওয়ানো সারি সারি মৃতদেহ। তীব্র-কটূগন্ধে দাঁড়িয়ে থাকাই দায়! আর সেখান থেকেই থেকে থেকে শোনা যাচ্ছে মোবাইল ফোনের রিংটোন। ওপারের আশা.. 'যদি একবার ফোনটা তোলে..'


অনেকে চিনতে পারছেন প্রিয়জনকে। অনেকে আবার মিল খুঁজছেন, আঁচ করে নিচ্ছেন। বিকৃত দেহাংশ থেকে নিজের মানুষকে খুঁজে নেওয়া যে কী মর্মান্তিকh, তা ভাষার প্রকাশ করতে গিয়ে গলা বুঁজে আসছে অধিকাংশেরই। ভুবনেশ্বর এইমসে এখনও রয়েছে ১৬০ জনের অসনাক্ত দেহ। তারমধ্যে ১০০ জনের দেহ এইমসেই সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। মৃতদের ডিএনএ-র নমুনাও সংরক্ষণ করে রাখা হচ্ছে। কটকে মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৯৩ জন। 


প্রিয়জনের খোঁজে কেউ ছুটছেন হাসপাতালে। কেউ আবার কোনও দিশা দেখতে না পেয়ে, ছুটে যাচ্ছেন মর্গে। এরইমধ্য়ে কেউ কেউ ঘটনাস্থলে গিয়ে খুঁজছেন আত্মীয়কে। যেমন, মালদার বাসিন্দা, নিত্য়ম রায়। আনরিজার্ভড কম্পার্টমেন্টে চড়ে বেঙ্গালুরু যাচ্ছিলেন। ঘটনার পর থেকেই ফোন সুইচড অফ। 


দুর্ঘটনার পর ২৭০ জনকে নিয়ে আসা হয়েছিল বালেশ্বর হাসপাতালে। তার মধ্যে হাসপাতালে আনার পথেই মৃত্যু হয় ২০ জনের। এখনও বিভিন্ন জায়গা থেকে পরিজনদের খোঁজে, ছবি হাতে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন বহু মানুষ।এদিন, হাসপাতালগুলিতে আহতদের দেখতে যান কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য। পর্যালোচনা বৈঠকও করেন তিনি।