হাওড়া : একের পর এক পাতায় পরপর নম্বর লিখে চলেছেন এক পুলিশ আধিকারীক। খানিক দূরের লম্বা হলঘরে যতদূর চোখ যায়, ততটা জুড়ে খালি নিথর দেহের সারি। প্রত্যেকটির গায়ে সাদা কাপড় চাপানো। আর মৃতদেহের পরিচয় হিসেবে 'নম্বর'গুলো পরপর সাঁটিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের গায়ে। প্রিয়জনের খোঁজে ভিড় করা পরিজনরা যাতে খুঁজে পান, তাই সেই ব্যবস্থা। যে ছবি বালেশ্বরের বাহানাগার বাজার হাইস্কুলের। যা ঘটনাস্থল থেকে খানিকটা দূরেই। বেশিরভাগ মৃতদেহ এনে রাখা হচ্ছে যেখানে।
সেখান থেকে এগিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে এগোলে অবশ্য পথজুড়ে কেবলই লাশের সারি। ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় ট্রেনলাইনগুলি দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। দেশলাই বাক্সের মতো উল্টে-পাল্টে পড়ে রয়েছে একের পর এক কামরা। আর তার মাঝেই রেললাইন যেন হয়ে গিয়েছে লাশের লাইন। একের পর মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা ২৯৫। আহত ৬৫০ জন। তবে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের বীভৎস দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা দুর্ভাগ্যবশত আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, এখনও জারি রয়েছে উদ্ধারকাজ। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরও প্রাণের খোঁজ জারি রয়েছে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে।
শুক্রবার সন্ধেয় চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের (Coromandal Express Derailed) ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রাই প্রথমে শুরু করেন উদ্ধারকাজ। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে কোনও ক্রমে বের করে আনা শুরু হয় আহতদের। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় এনডিআরএফের টিম। উদ্ধার কাজে নেমে পড়ে সেনা-আধাসেনা। ধ্বংসস্তূপে প্রাণের খোঁজ পেতে আনা হয় স্নিফার ডগ। গ্যাসকাটার দিয়ে উল্টে-পাল্টে যাওয়া কামরাগুলো কেটে চলতে থাকে প্রাণের খোঁজ। গতরাতের পর সকাল হতেই মৃতদেহের খোঁজে শুরু হয় হেলিকপ্টারে নজরদারি। ট্রেন বগিগুলি ক্রেন দিয়ে সরিয়ে শুরু হয় রেললাইন পরিষ্কারের কাজ। কিন্তু সময় এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনের গতির মতোই বাড়তে থাকে মৃত্যুর সংখ্যা। জমা হতে থাকে সারি সারি লাশ।
আরও পড়ুন- করমণ্ডলে মৃত্যুমিছিল, মৃত ৩০০ ছুঁইছুঁই! ছাপিয়ে গেল গাইসাল ট্রেন দুর্ঘটনার ভয়াবহতাকেও
ভয়াবহ দুর্ঘটনার ঘিরে ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজা। উল্লেখ্য, চারদিক থেকে নেতারা যখন বলছেন দেশ দ্রুত এগোচ্ছে, রেলের আধুনিকীকরণে নানা পদক্ষেপ করা হয়েছে, তখন পুরনো সব ভয়ঙ্কর রেকর্ড ছাপিয়ে বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় যে সংখ্য়ক মানুষের মৃত্য়ু হল, তা কিন্তু বহু প্রশ্ন উস্কে দিল।