রোম: করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কোনওদিনও হয়ত বের হবে না বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কাকে উড়িয়ে বিশ্বের প্রথম সফল কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন আবিষ্কার করার দাবি করল ইতালি।


খবরে প্রকাশ, রোমের সংক্রমণাত্মক রোগ সম্পর্কিত স্পালানজানি হাসপাতালে ওই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা করা হয়। গবেষকদের দাবি, ইঁদুরের শরীরে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করায় সেখানে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, যা মানুষের শরীরেও তৈরি হতে পারে। সংবাদসংস্থার খবর, খুব শীঘ্রই মানবেদেহে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ-পরীক্ষা শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।


ইতালির যে সংস্থা এই ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে, সেই তাকিস-এর এক শীর্ষকর্তা জানান, এখনও পর্যন্ত এটিই হল ইতালিতে তৈরি হওয়া কোনও ভ্যাকসিনের সবচেয়ে উন্নত পর্যায়ের পরীক্ষা। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, সম্ভবত এক-দুমাসরে মধ্য়েই মানুষের শরীরে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে দেখা হবে।


গবেষকদের দাবি, পরীক্ষার পন্থা হিসেবে ইঁদুরের শরীরে এই ভ্যাকসিন প্রয়োদ করা হয়েছিল। তাতে প্রশ্নাতীত সাফল্য মেলে। গবেষকরা জানিয়েছেন, একবার ভ্যাকসিনেশনের পরই, ইঁদুরের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে শুরু করে। পরে, ভাইরাস ঢোকানো হলে, ওই অ্যান্টিবডি রুখে দেয় ভাইরাসকে।


খবরে প্রকাশ, মোট পাঁচ ধরনের ভ্যাকসিন কম্বিনেশন নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। গবেষকদের দাবি, প্রত্যেকটিই বিপুল পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে। তবে, সেরা দুই কম্বিনেশন নিয়ে এগিয়ে চলেছেন গবেষকরা। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, এই ভ্যাকসিনগুলির ডিএনএ-নির্ভর। যেখানে কোভিড-১৯ ভাইরাস আরএনএ-নির্ভর। বর্তমানে, মডার্না নামে কেমব্রিজের বায়োটেক সংস্থা আরএনএ-নির্ভর ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে। ওই ভ্যাকসিনের নাম "এমআরএনএ-১২৭৩"।


এই কারণেই, করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে এখনই আশাবাদী হতে পারছেন না বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের আশঙ্কা, কোনওদিনই হয়ত এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন বের হবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর করোনা বিশেষজ্ঞ ডেভিড নাবারো বলেছেন, বছরের পর বছর ধরে গবেষণা চালানোর পর এখনও পর্যন্ত এইচআইভি বা ডেঙ্গির ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি। তাহলে, কী করে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বের হবেই।


তিনি যোগ করেন, চার দশক হয়ে গেল, সাড়ে তিন কোটি মানুষের মৃত্যু হল। এখনও বিশ্ব এইচআইভি ভ্যাকসিনের অপেক্ষায়। প্রতি বছর ডেঙ্গিতে ৪ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছেন। এখনও কোনও সঠিক ভ্যাকসিন নেই। আর যদিও বা কোনও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বের হয়, তাহলে তার কার্যকারিতা কতটা সেটাও দেখতে হবে। খারাপ দিকগুলিও বিবেচনার মধ্যে আনতে হবে। যেমন, যদি কোনওদিন ভ্যাকসিন বের না হয়, তাহলে কীভাবে এই সংক্রমণের মোকাবিলা করা হবে।


প্রসঙ্গত, বর্তমানে ১০০টির বেশি বিভিন্ন ধৎনের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এদের মধ্যে কয়েকটি চলছে প্রি-ক্লিনিকাল ট্রায়ালে। কিছু হিউম্যান ট্রায়াল ফেজ-এ প্রবেশ করেছে। ভ্যাকসিনের পাশাপাশি, কোভিড সংক্রমণ রুখতে বেশ কিছু অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধের প্রয়োগমূলক পরীক্ষাও চলছে। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নাম হল রেমডেসিভির।