নয়াদিল্লি: প্রায় দুই বছর। গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়েছে কোভিড সংক্রমণের ভয়। একের পর এক ভ্যারিয়েন্টের আক্রমণ। এক ঢেউ যেতে না যেতেই ফের আরও এক কোভিড ঢেউ আছড়ে পড়েছে। নানা দেশে অসংখ্যা মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্যা মানুষ। প্রথম চিনের উহানে খোঁজ মেলে এই সংক্রমণের। তারপর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। প্রথম থেকেই একটি অংশ থেকে দাবি করা হয়েছিল, কোভিড ভাইরাসের যা চরিত্র দেখা গিয়েছে, তাতে এই ভাইরাসটি প্রাকৃতিক ভাবে আসেনি বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। শুধু তাই নয়, চিনেই কোনও ল্যাবে তৈরি করা হয়েছে এই ভাইরাস, দাবি করা হয়েছিল এমনটাই। গোড়া থেকেই এই দাবি নস্যাৎ করে এসেছে চিন। যদিও এই দাবির প্রতিই অনড় থেকে গিয়েছিল একটি বড় অংশ। আবার কোনও কোনও বিজ্ঞানী দাবি করেছিলেন, ল্যাবে ভাইরাস তৈরি করা যায় না। ফলে কোভিড ভাইরাস মনুষ্যসৃষ্ট হওয়ার কারণ দেখছিলেন না তাঁরা। এখন যখন বিশ্বে কোভিডের দাপট মোটামুটি কমে এসেছে। কোভিড-পূরবর্তী অবস্থায় ফিরে এসেছে সারা বিশ্বের জনজীবন-অর্থনীতি। তখনই ফের সামনে এল কোভিড-ভাইরাসের উৎসের বিতর্ক।


আমেরিকার এক বিজ্ঞানী, যিনি চিনের উহানের গবেষণাগারে কর্মরত ছিলেন, তাঁরই লেখা একটি বই নিয়ে ফের শুরু হয়েছে বিতর্ক। কারণ সেখানে ওই বিজ্ঞানী দাবি করেছেন যে কোভিড মানুষের তৈরি ভাইরাস। যা কোনওভাবে গবেষণাগার থেকে বাইরে বেরিয়ে পড়েছিল।   


চিনের সরকারি প্রতিষ্ঠান উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (Wuhan Institute of Virology) থেকে কোনওভাবে বাইরে বেরিয়ে পড়েছিল কোভিড ভাইরাস। নিউ ইয়র্ক পোস্টের একটি প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দি সান-কে দেওয়া গবেষক অ্যান্ড্রু হাফ (Andrew Huff) -এর একটি মন্তব্যকে উদ্ধৃত করে এই খবর করা হয়েছে। মহামারি বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু হাফ তাঁর নতুন বই 'The Truth About Wuhan'-এ দাবি করেছেন যে এই ঘটনার পিছনে মার্কিন সরকারের তহবিলও দায়ী।


কী করতেন হাফ?
নিউ ইয়র্কের পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী হাফ ইকোহেল্থ অ্যালায়েন্স (EcoHealth Alliance) নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট। সেটি নিউ ইয়র্কের একটি সংস্থা যেটি সংক্রমক রোগ নিয়ে কাজ করে। হাফ তাঁর বইয়ে দাবি করেছেন যে চিনে অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিয়েই ভাইরাস নিয়ে কাজ চলছিল। যার ফলে গবেষণাগার থেকে কোনওভাবে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে এই ভাইরাস। কোভিড ১৯-এর সংক্রমণের শুরু থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল উহানের ওই গবেষণাগার। যদিও চিন সরকার এবং সেই গবেষণাগারের গবেষকরা দাবি করেছেন, কোভিড ১৯ ভাইরাস সেখানে তৈরি করা হয়নি। হাফ তাঁর বইয়ে দাবি করেছেন বায়োসেফটি, বায়োসিকিউরিটি এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত আরও যা যা প্রয়োজন, বিদেশের গবেষণাগারগুলিতে তা ঠিকমতো মানা হয় না। যার ফলেই উহানের ল্যাব থেকে এই বিপদ ঘটেছে।  


চিনের সঙ্গে কাদের যোগ? 
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে হাফের সংস্থা বাদুড়ের কোভিড ভাইরাস নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা করে আসছে। এই কাজের জন্য National Institutes of Health (NIH) থেকে অর্থও পেত ওই সংস্থা। আবার এই কাজের জন্য ওই সংস্থার সঙ্গে চিনের উহান ল্যাবের সঙ্গে ভালরকম যোগাযোগ ছিল। বায়োমেডিক্যাল সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা, জনস্বাস্থ্য গবেষণার জন্য এই NIH-ই আমেরিকার সরকারের প্রধান এজেন্সি।


ভয়ঙ্কর অভিযোগ:
২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইকোহেল্থ অ্যালায়েন্স (EcoHealth Alliance)-এ কাজ করেছেন অ্যান্ড্রু হাফ। তাঁর দাবি, ওই সংস্থা উহান ল্যাবকে একটি বিষয়ে সাহায্য করত। কী সেই কাজ? বাদুড়কে যে করোনা ভাইরাস আক্রমণ করে, সেটি অন্য কোনও প্রজাতিকে যাতে আক্রমণ করতে পারে তার জন্য ওই ভাইরাসকে তৈরি করা। ভাইরাসটিকে সেভাবে সক্ষম করার জন্য কী ভাবে কাজ করতে হবে সেটা নিয়েই কাজ চলত। হাফের দাবি, চিন প্রথম থেকেই জানত এটা জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড এজেন্ট। পাশাপাশি আমেরিকার দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তিনি। তাঁর দাবি, 'চিনের হাতে এই বিপজ্জনক বায়োটেকনোজি তুলে দেওয়ার পিছনে মার্কিন সরকার দোষী।' নিউ ইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, The Sun-কে হাফ বলেছেন, 'আমি যা দেখেছি তাতে আমি ভীত। আমরা জৈব অস্ত্রের কারিগরি ক্ষমতা তুলে দিয়েছি ওদের হাতে।'


আরও পড়ুন: মেজাজই আলাদা! বরের সঙ্গে বাইকে চড়ে বিয়ের আসরে প্রবেশ পোষ্যের, ভাইরাল ভিডিও