কলকাতা: গরু পাচারের কোটি কোটি টাকা ছেলে এবং শ্বশুরের অ্যাকাউন্টে সরাতেন ধৃত বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমার। আদালতে এমনটাই দাবি করেছে সিবিআই। যদিও সতীশ কুমারের আইনজীবী দাবি করেছেন, আদালতে সিবিআই এই দাবি প্রমাণ করতে পারবে না।

সল্টলেকের পাশাপাশি বাড়ি রয়েছে মুর্শিদাবাদ ও দিল্লিতে। বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে আছে বেনামি সম্পত্তি। গরু পাচার কাণ্ডে গ্রেফতার বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমারের এ রকম প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ মিলেছে বলে আগেই সিবিআই সূত্রে দাবি করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, সেই বিপুল টাকার বড় অংশ কি ছেলে ও শ্বশুরমশাইয়ের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিতেন ধৃত বিএসএফ অফিসার? আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে সিবিআই এই দাবি করেছে।

গরু পাচার কাণ্ডের তদন্তে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর মঙ্গলবার সতীশ কুমারকে গ্রেফতার করে সিবিআই। গতকাল কলকাতা থেকে নিয়ে গিয়ে আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে তোলা হয় তাঁকে। আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, ধৃত বিএসএফ কমান্ডান্টের শ্বশুর বাদলকৃষ্ণ সান্যাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্যাশিয়ার ছিলেন। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। তাঁর ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট জমা দিয়ে তিনি দাবি করেন, ধৃত বিএসএফ অফিসারের শ্বশুরের অ্যাকাউন্টে ১২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা রয়েছে। গরু পাচার কাণ্ডই এই টাকার উৎস বলে দাবি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার।

এরপরই ধৃত বিএসএফ অফিসারের আইনজীবী দাবি করেন, ২০১৬ সালে ডিক্লারেশন স্কিম অনুযায়ী আয়কর দফতরকে টাকার উৎস জানিয়েছেন সতীশের শ্বশুরমশাই। সিবিআই প্রমাণ করতে পারবে না যে, জামাইয়ের টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে পড়েছে। সিবিআই আইনজীবী পাল্টা দাবি করেন, ওই ১২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা গরু পাচার কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত এনামুল হকের মাধ্যমে ঘুরপথে এসেছে।

এখানেই শেষ নয়। সিবিআইয়ের আইনজীবী আরও দাবি করেন, ২০১৫ থেকে ১৭ সালের মধ্যে ধৃত বিএসএফ অফিসার সতীশ কুমারের ছেলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও বিপুল টাকা ঢুকেছে, তখন তিনি কোনও চাকরি করতেন না। পরে সতীশের ছেলেকে নিজের কোম্পানিতে চাকরি দেন গরু পাচার কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত এনামুল হক।

কীভাবে হত গরু পাচার? নিয়ম হল, পাচার হওয়ার আগে গরু বাজেয়াপ্ত করে, সেগুলিকে কাস্টমস বিভাগকে দিয়ে দেয় বিএসএফ। তারপর সেই গরু নিলামে তোলে শুল্ক দফতর। সিবিআই সূত্রে দাবি, এখানেই বড়সড় খেলা চলত বিএসএফ ও কাস্টমস বিভাগের মধ্যে। কিন্তু কীভাবে? ধরা যাক ২০০ কেজি ওজনের বেশ কয়েকটি গরু বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু সিজার লিস্টে সেই ওজন কমিয়ে ৫০ কেজি করে বা বাছুর হিসেবে দেখানো হত। এরপর নিলামে সেই পাচারকারীদেরই গরুগুলি কম দামে বিক্রি করে দেওয়া হত। ঘুরপথে সেই গরু আবার পাঠিয়ে দেওয়া হত সীমান্তের ওপারে।

এদিন আসানসোলের আদালতে ধৃতের আইনজীবী দাবি করেন, সতীশ কুমারের অধীনে বিএসএফের আরও অনেক অফিসার সীমান্তে কাজ করেন। তাঁরাই পাচার হওয়ার সময় গরু বাজেয়াপ্ত করতেন। তাই এখানে সতীশের ভূমিকা নেই। সঙ্গে সঙ্গে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, সতীশ বিএসএফের কমান্ডান্ট পদে ছিলেন। যিনি সিজার লিস্ট তৈরি করতেন, সেই অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্ট সতীশের অধীনেই থাকেন। তাহলে তিনি কিছু জানেন না, তা মেনে নেওয়া যায় না। এর প্রেক্ষিতে বিচারক ধৃতের উদ্দেশ্যে মন্তব্য করেন, আপনি তো কিছুদিনের মধ্যে বলবেন, গরুপাচারের সময় আপনি ছিলেনই না! সিবিআই আরও দাবি করে, সতীশ কুমারের সময় ২০ হাজার গরু বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। যেখানে বিএসএফের পাশাপাশি শুল্ক দফতরের অফিসাররাও জড়িত।

এদিন আদালতে সিবিআই আরও দাবি করে, তাঁকে সমন পাঠানোর পর ৩২ দিন ছুটি নিয়েছিলেন সতীশ। তখন কলকাতাতেই ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। এমনকী সাক্ষীদের প্রভাবিত করার পাশাপাশি হুমকিও দিতেন। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বেশ কয়েকজন সাক্ষীর বয়ানের রেকর্ড আদালতে পেশ করে সিবিআই। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে ধৃত বিএসএফ কমান্ডান্টকে ১৪ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।

২৪ নভেম্বর এনামুল হককে ফের হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে সিবিআই। সূত্রের খবর, এবার তাঁর সঙ্গে ধৃত বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করবেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।