ইসলামাবাদ: যত দিন এগোচ্ছে, ততই পরিস্থিতি ভয়াবহ হচ্ছে পাকিস্তানের (Pakistan Crisis)। মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ক্রমশ গ্রাস করছে গোটা দেশকে। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্কটজনক যে, গত পাঁচ দশকে দেশে সর্বোচ্চ গিয়ে ঠেকল মুদ্রাস্ফীতির হার। মার্চ মাসে পাকিস্তানে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার ৩৫.৩৭ শতাংশে এসে ঠেকেছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অর্থসাহায্য়ের দিকে তাকিয়ে পাকিস্তান সরকার। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, সেই সম্ভাবনাও ক্ষীণ হচ্ছে (Pakistan News)। 


গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে বন্যা, বিদ্যুৎ বিপর্যয়


দশকের পর দশক ধরে অর্থনৈতিক অব্যবস্থা, রাজনৈতিক অস্থিরতাই পাকিস্তানকে এই ভয়াবহতার মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে মত অর্থনীতিবিদদের। সেই আবহেই গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে বন্যা, বিদ্যুৎ বিপর্যয়। তার উপর ঋণভারেও জর্জরিত দেশ। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের দ্বারস্থ হয়েছে পাকিস্তান সরকার। বিপুল টাকার অর্থসাহায্যর আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু তার জন্য যে শর্ত ধরানো হয়েছে IMF-এর তরফে এখনও পর্যন্ত তা পূরণ করতে পারেনি পাকিস্তান।


এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দেশের সাধারণ নাগরিকদের। রমজান মাসে কার্যত দানাপানিও জুটছে না তাঁদের। বিশেষ করে আটার জোগানে আকাল দেখা দিয়েছে। আটার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে গত দশ দিনে প্রায় ২০ জন ধস্তাধস্তিতে প্রাণ হারিয়েছেন সেখানে। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন পাঁচ মহিলা, তিন শিশুও। খাদ্য বণ্টন কেন্দ্রগুিল উপচে পড়ছে ভিড়ে। কিন্তু ভিতরে মাছি তাড়ানোর অবস্থা। কারণ খাদ্যদ্রব্যের জোগানই নেই।


আরও পড়ুন: China Population: বসন্তে প্রেম আসুক জীবনে, কোল আলো করুক সন্তান, জনসংখ্যায় ভারসাম্য আনতে গণছুটি চিনে


করাচির বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ শাহিদা উইজারত সংবাদমাধ্যমে বলেন, "পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, যে ভাবে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে চলেছে, তাতে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা মাথাচাড়া দিচ্ছে।" শুক্রবার করাচিরই একটি কারখানায় রমজানের খাবার বিতরণ ঘিরে হুলস্থুল বাধে। পদপিষ্ট হয়ে মারা যান কম পক্ষে ১২ জন। 


পাকিস্তানের জনসংখ্যা প্রায় ২৩ কোটি। IMF-এর কাছে ৬৫০ কোটি ডলার অর্থসাহায্য চেয়েছে তারা। কিন্তু কর সংশোধন থেকে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোনও শর্তই এখনও পর্যন্ত পূরণ করতে পারেনি তারা। বরং প্রত্যেক শর্তপূরণেই ব্যর্থ হয়েছে তারা। লাগাতার মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে। সরকারের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের জোগান নেই।  তাতেই ব্যবধান ঘোচানো সম্ভব হচ্ছে না।


বন্যা আরও বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে পাকিস্তানকে


ভয়াবহ বন্যা আরও বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে পাকিস্তানকে। বিঘের পর বিঘে জমি জলের নিচে চলে যাওয়ায়, ফসলের উৎপাদন বন্ধ। প্রচুর ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। খাদ্যসঙ্কটের জন্য এই পরিস্থিতিও দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। তার উপর সরকারি কোষাগারে মজুত সঞ্চিত বিদেশি মুদ্রাও তলানিতে। এই মুহূর্তে পাকিস্তানের হাতে যা বিদেশি মুদ্রা রয়েছে, তাতে এক মাসও পণ্য আমদানি সম্ভব নয় বলে জানা গিয়েছে।