কলকাতা: বয়ে যাওয়ার দু’দিন পরেও জেলায় জেলায় ধ্বংসাত্মক প্রভাব রেখে গিয়েছে ঘূর্ণিঝড় উমপুন। কোথাও তীব্র পানীয় জলের সঙ্কট তো কোথাও নদী-বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন গোটা এলাকা। টেলি-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বহু জায়গায়। জার জেরে শুরু হয়েছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ।
উমপুনের জেরে হাওড়া পুরসভা এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট। পাশাপাশি, বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন। জল ঢুকেছে পদ্মপুকুর জল প্রকল্পের ভিতরে। ৯টি পাম্পের মধ্যে অধিকাংশ পাম্পই জলের তলায়। সেগুলি মেরামতির কাজ চলছে। পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দেওয়ায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে জলের ট্যাঙ্ক পাঠিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চলছে। কলকাতা পুরসভা থেকেও ৫০টি জলের ট্যাঙ্ক পাঠানো হচ্ছে। দাশনগর এলাকায় পানীয় জলের ট্যাঙ্ক থেকে জল নেওয়ার জন্য লম্বা লাইন।
সুপার সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসলীলার ছবি শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে। ২৩০ বছরের পুরনো এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ উদ্ভিদ উদ্যান লন্ডভন্ড। ঝড়ের হাত রেহাই পায়নি বিশ্বের সবথেকে বড় বটগাছ। বড় বড় গুঁড়ি উপড়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মেহগনি গাছের সারি। দেশি-বিদেশি প্রচুর গাছ উপড়ে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দুষ্প্রাপ্য ভেষজ উদ্ভিদও। প্রচুর পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিন ঝড়ে বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন বোটানিক্যাল গার্ডেনের আধিকারিক ও বিজ্ঞানীরা। কীভাবে এই উদ্ভিদ উদ্যানকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে শুরু হয়েছে পরিকল্পনা। বোটানিক্যাল গার্ডেন সূত্রে খবর, সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত গাছগুলি সরিয়ে লাগানো হবে একই প্রজাতির নতুন গাছ। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত গাছগুলিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হবে শীঘ্রই।
উমপুনের তাণ্ডবের জের। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে মণি নদীর বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন কুমোরপাড়া এলাকা। শতাধিক বাড়িতে জল ঢুকেছে। স্থানীয় একটি স্কুলে আশ্রয় নেন বাসিন্দারা। কবে বাঁধ মেরামতি হবে, তারই অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।
উমপুনের তাণ্ডবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবায় জলের তোড়ে ভেঙে পড়েছে রায়মঙ্গল নদীর বাঁধ। হু-হু করে জল ঢুকছে আমতলি গ্রাম পঞ্চায়েতের পুঁইজালি, পেটোয়াখালি, হরিতলা সহ ৫-৬টি গ্রাম। বাঁধ মেরামতির আশায় দিন গুণছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঘূর্ণিঝড় উমপুনের দাপটে তছনছ দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার তৃণমূল বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের ফলের বাগান। ভেঙে পড়েছে আম, জাম, নারকেল, সবেদা,জামরুল গাছ।
জলের তলায় হুগলির শ্রীরামপুরের নতুন মাহেশ এলাকা। কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও আবার কোমর পর্যন্ত জল। এলাকার কয়েকজন যুবক মিলে একটি উঁচু বাড়িতে কমিউনিটি কিচেন তৈরি করেছেন। সেখানে রান্না করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাবার।
শ্রীরামপুরে একটি খেলার মাঠে কোমর সমান জল। ভেঙে পড়েছে বার পোস্ট। বিভিন্ন জায়গায় উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। টেলি-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন এলাকার বহু প্রবীণ নাগরিক। জেনারেটর এনে মোবাইল টাওয়ারের পরিষেবা চালু করার চেষ্টা চলছে।
হুগলির উত্তরপাড়ায় জিটি রোড অবরোধ স্থানীয়দের। ঝড়ে উপড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুত্হীন। পাম্প না চলায় জল মিলছে না। এই কারণে সকাল থেকে শুরু হয় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ। পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দেওয়ায় বেড়েছে মিনারেল ওয়াটারের চাহিদা। অপর্যাপ্ত জোগানের কারণে সমস্যায় পড়েছেন বাসিন্দারা।