গণেশ ঠাকুর, কাশ্মীর: কুপওয়াড়ার দর্দপুরা। কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী গ্রাম । "বেদনার আবাস"। এ গ্রামে সুদীর্ঘকাল হাসি নেই। নেই দাম্পত্য সুখ। কপোত-কপোতির খুনসুটি। আছে শুধু বিরহ। যাতনা। আর অতীতের মর্মান্তিক স্মৃতি। এ গ্রাম বিধবা মহিলাদের। তাই এই গ্রামকে বলা হয় বিধবাদের গ্রাম। এখানে প্রায় বহু পিতৃহারা অপ্রাপ্তবয়স্ক, শতাধিক বিধবা মহিলার বাস। শোনা যায় এ গ্রামের আইবুড়ো মেয়েদেরও বিয়ে করতে চায় না অনেকে। ভূস্বর্গের মধ্যে এ এক তীব্র যন্ত্রণার জায়গা।
দর্দপুরা,আক্ষরিক অর্থেই যন্ত্রণার আবাস
এই গ্রামে হাজারো না - পাওয়া । অনেকের কাছেই এই গ্রাম অপয়া। ৯০ এর দশকে এই গ্রামের পুরুষদের বেছে বেছে খুন করে জঙ্গিরা। এখনও এখানে হয়ত অনেক না-পাওয়া। জলের অভাব, বিদ্যুতের অভাব, শিক্ষার ব্যবস্থাও খুব ভাল নয় বলে অভিযোগ করেন কেউ কেউ। সন্ত্রাস কেড়ে নিয়েছে এই গ্রামের মেয়েদের স্বামীদের। তাই গোটা গ্রাম কার্যত পুরুষশূন্য। তাই জম্মু কাশ্মীরে ভারত-পাক সীমান্তে শেষ জনপদ কুপওয়াড়ার দর্দপুরা,আক্ষরিক অর্থেই যন্ত্রণার জায়গা।
একের পর এক খুনের ঘটনা
৯০-এর দশকে এই গ্রামের পুরুষদের টার্গেট করেছিল জঙ্গিরা। একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটেছে। এই গ্রামের অনেকের স্বামী আবার নিখোঁজও । তাঁদের হয়ত মৃত বলে ঘোষণাও করা হয়নি। আবার তাঁরা ফেরেননি ঘরে বহু বছর। এই নারীদের "অর্ধ-বিধবা" বলা হয়। বহু বছর চরম অনিশ্চয়তা, আইনি জটিলতা , আর্থিক এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়ে যাচ্ছেন এঁরা। মুসলিম ধর্মীয় আইন অনুসারে, নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর সাত বছর পর না কাটলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা যায় না। তাই এই গ্রামের অনেককেই নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হন। না-ফেরা স্বামীর সম্পত্তি বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে সমস্যা হয়। কারণ তাদের মৃত্যুর শংসাপত্র নেই। তাই এই গ্রাম একপ্রকার যন্ত্রণার প্রতীক । তবে তারি মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতার উদাহরণ তৈরি করেছেন তাঁরা।
পাকিস্তানের নাকের ডগায় গণতন্ত্রের জয়
স্বামীহারা একা মহিলারাই রুখে দিয়েছেন জঙ্গিদের। সন্ত্রাসবাদকে হারিয়ে সেখানে খুলেছে স্কুল। দর্দপুরার এই স্কুলের নাম সরহদ পাবলিক স্কুল। পড়ুয়ারা স্বপ্ন দেখে, বড় হয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার। এ যেন পাকিস্তানের নাকের ডগায় গণতন্ত্রের জয়।