সুনীত হালদার, হাওড়া: জনপ্রিয় হিন্দি ছবি দিওয়ারে-তে অমিতাভ বচ্চনকে বলতে শোনা গিয়েছিল তাঁর কাছে বিল্ডিং, ব্যাংক ব্যালেন্স, বাংলো আছে। তাঁর ভাইয়ের কাছে কি আছে? ভাই শশী কপূর উত্তর দিয়েছিলেন তাঁর কাছে মা আছেন। কিন্তু হাওড়ার সাবিত্রী দেবী মা হয়েও ভালোবাসা পাননি ছেলের থেকে। তাঁর মেয়ে তাঁকে স্টেশনে ফেলে চলে যান। বৃদ্ধা মা হঠাৎ ট্রেনে চেপে পৌঁছে যান মুম্বইতে। পরে সেই মায়ের খোঁজ পেয়ে মুম্বাইতে রওনা হন বড় মেয়ে। উদ্দেশ্য নিখোঁজ মাকে নিয়ে ঘরে ফেরা। বুধবার এমন ঘটনার সাক্ষী রইল হাওড়া স্টেশন।
সাবিত্রী দেবীর বয়স ৭৫ বছর। মাথায় সাদা চুল। একটু ঝুকে হাঁটেন। ডায়াবেটিসের রোগী। সবকিছু মনে রাখতে পারেন না। ভুলে যান। এক ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে থাকতেন হাওড়ার রামরাজাতলায়। সাবিত্রী দেবীর দুই মেয়ে। ২ জনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। বড় মেয়ে থাকেন হুগলির রিষড়াতে। ছোট মেয়ে থাকেন উত্তরপ্রদেশের বলিয়াতে। এ বছরের জানুয়ারি মাসে তিনি ছেলের সঙ্গে বালিয়াতে ছোট মেয়ের বাড়িতে চলে যান। সেখানেই মাস কয়েক থাকছিলেন। কিন্তু ওই মেয়ের পরিবার অসুস্থ সাবিত্রী দেবীকে বেশিদিন রাখতে চাননি। একদিন সাবিত্রী দেবীকে ছোট মেয়ে বাড়ির সামনের স্টেশনের প্লাটফর্মে ফেলে রেখে চলে আসেন। তারপর আর বৃদ্ধার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তাঁর বড় মেয়ে কল্যাণী দেবী ভার্মা মায়ের খোঁজ করলে তাঁকে বলা হয় খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে বৃদ্ধা ট্রেনে চড়ে সোজা মুম্বই পৌঁছন। সেখানে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাঁকে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে সুস্থ করার পর তাকে বাড়ি ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এদিকে কল্যাণী দেবী ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের মারফত খবর পায় তাঁর মাকে পাওয়া গেছে। মোবাইলে ভিডিও কলের মাধ্যমে এবং হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও দেখে তিনি তাঁর মা সাবিত্রী দেবীকে চিনতে পারেন। তাঁর মাও তার নাম বলতে পারেন। এরপরই কল্যাণী দেবী তাঁর মেয়েকে এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার দুপুরে রওনা হন মুম্বইয়ের উদ্দেশ্যে। মাকে ফিরে পেয়ে খুশি মেয়ে। কল্যাণী দেবী বলেন, “মাকে ফিরে পেয়ে ভীষণ ভালো লাগছে। এবার থেকে মাকে নিজের কাছেই রেখে দেব।”
করোনা আবহে সংসার চালানো দায়। বৃ্দ্ধ বাবা-মায়ের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণের ঘটনা আগেও উঠে এসেছে। এমনকী করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর বাবা অথবা মায়ের কাছে না যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। দায়িত্ব কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলার জন্য বাবা, মায়ের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ। কিন্তু ব্যতিক্রমও রয়েছে। কল্যাণী দেবীর মতো মেয়ে প্রমাণ করল ভালোবাসা ও কর্তব্যের টান কত গভীর। যেন অন্ধকার সুড়ঙ্গের এক আলোক বিন্দু।