নয়াদিল্লি: উচ্চশিক্ষার জন্য নিজের বাড়ি ছেড়ে রাজধানীতে আগমন। কিন্তু সেই মেয়ের কোনও খোঁজ নেই গত এক সপ্তাহ ধরে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর অন্তর্ধান ঘিরে রহস্য ক্রমশ দানা বাঁধছে। কারণ সিসিটিভি ফুটেজেও মেয়েটির দেখে মেলেনি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা বা অনলাইন লেনদেনও বন্ধ পুরোপুরি। খালিহাতে কোথায় গেলেন মেয়েটি, প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারছে না পুলিশও। (Delhi University Student Missing)

ত্রিপুরার বাসিন্দা ১৯ বছর বয়সি স্নেহা দেবনাথ। দিল্লি বিশ্ববিদ্য়ালয়ের অন্তর্গত আত্মারাম সনাতন ধর্ম কলেজে পড়তে এসেছিলেন। ওই তরুণীর শেষ লোকেশন ছিল সিগনেচার ব্রিজ। কিন্তু তার পর থেকে আর কোনও হদিশ নেই। তরুণী কি উবে গেলেন? প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। পাশাপাশি, রাজধানীতে সিসিটিভি পরিষেবায় যে ফাঁক রয়ে যাচ্ছে, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। (Sneha Debnath Missing)

এখনও পর্যন্ত যে তথ্য সামনে এসেছে, সেই অনুযায়ী, গত ৭ জুলাই এক বন্ধুকে সরাই রোহিল্লা রেল স্টেশনে ছাড়তে গিয়েছিলেন স্নেহা। সেই থেকে আর কোনও খোঁজ নেই তাঁর।  পরিবারের লোকজন হন্যে হয়ে ঘুরছেন এই মুহূর্তে। পুলিশ-প্রশাসনের তরফেও শুরু হয়েছে তল্লাশি। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার দফতরও বিষয়টির দিকে নজর রাখছে। রাজ্য পুলিশের একটি দলও তল্লাশিতে যুক্ত হয়েছে।

স্নেহার বাবা প্রাক্তন সেনাকর্মী, সুবেদার মেজর (সাম্মানিক লেফটেন্যান্ট) প্রীতীশ দেবনাথ। এই মুহূর্তে কিডনির সমস্যায় জেরবার তিনি। ডায়ালিসিস চলছে। পরিবারের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ৭ জুলাই-ই শেষবার ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা হলেন স্নেহা। জানান, সকাল পৌনে ৭টায় স্টেশনে বন্ধুকে ছাড়তে যাওয়ার কথা জানান। ভোর ৫টা বেজে ৫৬ মিনিটে শেষবার কথা হয়। এর পর বাড়ি থেকে ৮টা বেজে ৪৫ মিনিটে ফের ফোন করা হয় স্নেহাকে। কিন্তু তখন ফোন বন্ধ ছিল। 

পরবর্তীতে বাড়ির লোকজন জানতে পারেন, সকালে স্নেহার সঙ্গে দেখাই হয়নি ওই বন্ধুর। এর পর এক ক্যাব চালকের সন্ধান মেলে। জানা যায়, রেল স্টেশনে নয়, স্নেহাকে সিগনেচার ব্রিজে নামিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখান থেকে কোথায় গেলেন স্নেহা? জানা যাচ্ছে না। ঘটনাচক্রে, সিগনেচার ব্রিজের একটি সিসি ক্যামেরাও কাজ করছে না। ফলে তদন্তে নেমে কার্যত হাতড়ে বেড়াতে হচ্ছে পুলিশকে।

শেষ বার যে লোকেশন পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে তল্লাশিও চালিয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখার তদারকিতে প্রায় সাত কিলোমিটার জায়গা জুড়ে চলে তল্লাশি ৯ জুলাই। কিন্তু কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি মেয়েটির। নিজের ফোনটি নিয়েই শুধু বেরিয়েছিলেন স্নেহা। গত চার মাসে কোনও টাকাও তোলেননি তিনি। অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্সে কোনও হেরফের হয়নি। পরিবারের বক্তব্য, “সবচেয়ে যন্ত্রণার বিষয় হল, কোনও উত্তর মিলছে না। নিখোঁজ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে FIR দায়ের হয়। সিসি ক্যামেরা কাজ করলে অন্তত মেয়ের সঙ্গে কী ঘটেছে বুঝতে পারতাম।”

সরাই রোহিল্লা স্টেশন থেকে সিগনেচার ব্রিজের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। উত্তর দিল্লির ওয়াজিরিবাদের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশকে সংযুক্ত করেছে ব্রিজটি। পরিবারের মতে, ১৯ বছরের স্নেহাই শুধু বয়, দিল্লির সমস্ত মহিলার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ ৯৬ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও, এখনও সকলে অন্ধকারে। স্নেহা যেন নিখোঁজের তালিকায় ঢুকে না যায়, তার জন্য সাধারণ মানুষ, সংবাদমাধ্যমকেও অনুরোধ জানানো হয়েছে পরিবারের তরফে। তাঁদের বক্তব্য, “ও আমাদের মেয়ে। ওকে পেতেই হবে আমাদের। কারও কাছে কোনও তথ্য থাকলে, যত নগই হোক, দয়া করে জানান।” এই ঘটনায় অপহরণের মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।