নয়াদিল্লি: রাইসিনা থেকে অনতিদূরে দিল্লির মসজিদে ঢুকে কিছু দিন আগেই হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। ফের খবরের শিরোনামে উঠে এলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘের (Rashtriya Swayamsevak Sangh) প্রধান মোহন ভাগবত (Mohan Bhagwat)। তাঁর দাবি, ভারতে বসবাসকারী প্রত্যেক নাগরিকই হিন্দু। সব ভারতীয়র DNA-তে কোনও তফাত নেই। তাই আচার-অনুষ্ঠান পালনের প্রয়োজন নেই। তাঁর এই মন্তব্য স্বভাবতই শোরগোল ফেলে দিয়েছে। কারণ ইদানীং কালে একাধিক রাজ্যে 'ঘরওয়াপসি'র নেপথ্যে সঙ্ঘের ছত্রছায়ায় থাকা একাধিক ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক সংগঠনের নাম জড়িয়েছে বার বার।


'ঘরওয়াপসি'র বিরুদ্ধেই কি কথা বললেন ভাগবত! 


সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর তরফে ভাগবতের মন্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে সঙ্ঘ প্রধান বলেন, "১৯২৫ সাল থেকে বলে আসছি  (যে সময় সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা হয়) যে, ভারতে বসবাসকারী সকলেই হিন্দু। যে বা যাঁরা ভারতকে নিজের মাতৃভূমি বলে মনে করেন, বৈচিত্রের মাধে ঐক্যের সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করেন এবং সেই নীতি মেনেই চলেন, ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা, খাদ্যাভ্যাস আদর্শ যাই হোক না কেন, তাঁরা সকলেই হিন্দু।"


মঙ্গলবার ছত্তিসগড়ের সুরগুজা জেলার অম্বিকাপুরে সঙ্ঘের দফতরে সংগঠনের সেবক তথা স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন ভাগবত। সেখানে বৈচত্রের মধ্যে ঐক্যের বার্তা দেন তিনি। জানান, প্রাচীন কাল থেকেই ভারতের পরিচিতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত এই ভাবনা। গোটা বিশ্বে, একমাত্র হিন্দুত্বই সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলার কথা বলে, এমনও দাবি করেন ভাগবত। 


মানবস সভ্যতার একত্রীকরণ এবং বৈচিত্রের প্রতি হিন্দুত্ব নিবেদিত বলেও মন্তব্য করেন ভাগবত। তাঁর কথায়, "গোটা বিশ্বে হিন্দুত্বই একমাত্র আদর্শ, যা বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের কথা বলে। কারণ হাজার হাজার বছর ধরে এই নীতি বৈচিত্রকে বুকে নিয়েই নিয়েই চলে এসেছে হিন্দুত্ব। মোদ্দা কথা হল, আমরা সকলেই এক হতে পারি। সঙ্ঘের কাজই হল, দেশের স্বার্থে ব্যক্তি নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করা।"


আরও পড়ুন: Gujarat Assembly Elections 2023: দিল্লির নেতাদের চোখ-কান তিনি, নাম ধরে চেনেন কর্মীদের, গুজরাতে ভূপেন্দ্রই ফের মুখ্যমন্ত্রী, ঘোষণা শাহের


সব ধর্মের সমান মর্যাদার কথা বলতেও শোনা যায় ভাগবতকে। সব ভারতীয়র পূর্বপুরুষ এক, তাই DNA-ও এক বলে দাবি করেন। তাঁর বক্তব্য, "বহুবিধ পার্থক্য থাকলেও, আমরা সবাই আসলে একই। আমাদের পূর্বপুরুষও এক। ৪০ হাজার বছরের অখণ্ড ভারতের অংশ যাঁরা, তাঁদের সকলের DNA এক। আমাদের পূর্ব পুরুষরাই শিখিয়েছেন,  সকলের নিজ নিজ ধর্ম, আচার নিয়ে চলা উচিত। কাউকে ধর্মান্তরিত করার প্রয়োজন নেই। সব রাস্তাই এক জায়গায় গিয়ে শেষ হয়।"


ভাগবত আরও বলেন, "প্রত্যেক ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠানকে সম্মান করা উচিত। সকলকে সম্মান করেই নিজের মতো চলতে হবে। নিজের লক্ষ্যপূরণ করুন, কিন্তু এতটাও স্বার্থপর হবেন না, যেখানে অন্যকে তাচ্ছিল্য করা যায়।"


ঐক্যের উদাহরণ দিতে গিয়ে করোনার জেরে উদ্ভুত অতিমারির প্রসঙ্গও তুলে ধরেন ভাগবত। তিনি বলেন, "আমাদের সংস্কৃতিই সকলকে একজোট করে। এমনিতে যতই লড়াই করি না কেন, সঙ্কটের সময় ঐক্যবদ্ধ হই আমরা। দেশ সঙ্কটে পড়লে, করোনার সময়ে, গোটা দেশ একজোট হয়ে মোকাবিলা করেছিল।"


সম্প্রতি দিল্লির মসজিদে ইমামদের সঙ্গে বৈঠক করেন ভাগবত


উল্লেখ্য, কিছু দিন আগেই দিল্লির মসজিদে দেখা গিয়েছিল ভাগবতকে। সেখানে সর্বভারতীয় ইমাম সংগঠনের কর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকও করেন তিনি। কথায় কথায় তাঁদের পাকিস্তান চলে যাওয়ার নিদান, বার বার ভারতীয়ত্বের প্রমাণ দিতে বাধ্য করার মতো অভিযোগ নিয়ে ভাগবতের দ্বারস্থ হন ইমামরা।