গোরক্ষপুর: উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতাসীন যোগী আদিত্যনাথ সরকারের সঙ্গে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ কাফিল খানের বিরোধ সর্বজনবিদিত। কাফিল নানা ইস্যুতে ক্ষমতাসীন সরকার ও গেরুয়া শিবিরের বিরোধিতা করেছেন প্রকাশ্যেই। এবার তাঁকে বরাবরের অপরাধীর তালিকায় ঢোকাল রাজ্য প্রশাসন। উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলায় অপরাধের ইতিহাস আছে, এমন মোট ৮১জনের মধ্যে তাঁকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সিনিয়র পুলিশ সুপার যোগেন্দ্র কুমারের নির্দেশে। গোরক্ষপুর জেলায় মোট ১৫৪৩ জনের নামের তালিকা রয়েছে যাদের অতীতে অপরাধের রেকর্ড আছে।
কাফিলের ভাই আদিল খান অবশ্য সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, তাঁর ডাক্তার-দাদার বিরুদ্ধে অপরাধের শিট অর্থাত্ তালিকা খোলা হয় গত বছরের ১৮ জুন, যদিও সেই তথ্য মিডিয়াকে দেওয়া হয়েছে গত শুক্রবার।
কাফিল প্রথম শিরোনামে আসেন ২০১৭-য়। গোরক্ষপুর জেলা সরকারি হাসপাতালে মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি ঘটে যায়। অক্সিজেনের অভাবে শতাধিক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় তাঁকেই দায়ী ঘোষণা করে কাঠগড়ায় তোলে প্রশাসন। অন্য অনেকের সঙ্গে তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়। জাতীয় স্তরে আলোড়ন পড়ে যায়। যদিও নানা মহলের দাবি ছিল, তাঁকে বলির পাঁঠা করা হয়েছিল প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতে। যদিও অভ্যন্তরীণ তদন্তে ২০১৯ এর সেপ্টেম্বর কাফিলের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। যদিও তার বিরুদ্ধে পরে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দেয় উত্তরপ্রদেশ সরকার। তারপর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে রুজু হয় একাধিক মামলা।
এদিকে তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধের রেকর্ড আছে বলে ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় কাফিল এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, উত্তরপ্রদেশ সরকার আমার অপরাধের তালিকা খুলেছে। ওরা বলছে, বাকি পুরো জীবনটা আমার ওপর নজরদারি চালানো হবে। ভালই হল, দুটো নিরাপত্তারক্ষী পাব যারা ২৪ ঘন্টার আমায় চোখে চোখে রাখবে। অন্তত নিজেকে মিথ্যা মামলার হাত থেকে রক্ষা তো করতে পারব। কাফিল আরও বলেন, উত্তরপ্রদেশে পরিস্থিতি এমন যে, অপরাধীদের ওপর নজরদারি হয় না, নির্দোষ, নিরপরাধ লোকজনের অপরাধ তালিকার খাতা খোলা হয়।
২০২০-র জানুয়ারি মাসে কাফিলকে গ্রেফতার করা হয়, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯ এর ১০ ডিসেম্বর সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী প্রতিবাদ-আন্দোলনের সময় দেওয়া ভাষণের জন্য। জাতীয় সুরক্ষা আইনের (এনএসএ) কঠোর ধারায় অভিযুক্ত হন তিনি। কিন্তু ২০২০-র ১ সেপ্টেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্ট এনএসএ-তে কাফিলের গ্রেফতারি খারিজ করে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিয়ে জানিয়ে দেয়, এএমইউতে দেওয়া ভাষণে তিনি ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়ানো বা হিংসায় উস্কানি-কোনওটাই দেননি।
ভিডিও বার্তায় কাফিল জানিয়েছেন, তিনি রাজ্য সরকারকে লিখিত আবেদন করেছেন, যাতে তাঁকে গোরক্ষপুরের বাবা রাঘব দাশ মেডিকেল কলেজে তাঁর পদে পুনর্বহাল করা হয়।