করোনা নিয়ে ক্রমেই বাড়ছে আতঙ্ক। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বাড়ছে মৃত্যুও। এ রাজ্যেও আক্রান্তের সংখ্যা ২০র বেশি। ক্রমেই গোষ্ঠী সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে মানুষ। কারা সহজেই করোনা ভাইরাসের টার্গেট হতে পারেন, তাই নিয়ে নানারকম তথ্য সামনে আসছে।
করোনার চরিত্র নিয়ে নানা তত্ত্ব উঠে এলেও, একটি ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা সহমত। প্রৌঢ় ও বয়স্করা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বেশ। দেশে করোনা-মৃত্যুর পরিসংখ্যানও এই তথ্যকে সমর্থন করছে।


আরেকটি বিষয়েও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতের অমিল নেই। করোনা ভাইরাস যেহেতু শ্বাসনালী ও রেসপিরেটরি সিস্টেমকে সরাসরি আক্রমণ করে, তাই ধূমপায়ীদের ঝুঁকি এক্ষেত্রে বেশিই।

সিনিয়র পালমনোলজিস্ট ডা. ধীমান গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, শুধু করোনা থেকে বাঁচতে নয়, আরও বহু বহু রোগ-জীবাণু থেকে বাঁচতেই সিগারেট ছাড়ার কোনও বিকল্প নেই। ধূমপায়ীদের ফুসফুস এমনিই যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত, তার উপর যদি করোনার মতো ভাইরাস শরীরে ঢোকে, তাহলে তা সহজেই বিপদ ডেকে আনা।

ইনস্টিটিউট পালমো কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ-এর চিকিৎসক ডা. পার্থসারথি ভট্টাচার্য জানালেন, ধূমপান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। মদ্যপানও তাই। তাই তামাক সেবন, ধূমপান ও মদ্যপানে করোনা কেন, অন্য অসুখও করতে পারে। তাই এই মুহূর্তে ছাড়তেই হবে সিগারেট। দরকারে চুইংগাম খেতে পারেন, ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন এই ব্যাপারে, জানালেন ডা. ভট্টাচার্য।

তবে সিগারেট ছাড়লেই যে বিপদ মুক্ত তা নয়, ধীরে ধীরে রেসপিরেটরি ফিজিওলজি ইমপ্রুভ করবে, জানালেন চিকিৎসকরা ।

ধূমপানে কোন বয়সের মানুষরা বেশি ঝুঁকিতে? করোনায় বয়স্কদের আক্রান্ত হওয়ার হার বেশ। কিন্তু ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে কম বয়সেও একই রকম ঝুঁকি।

ডা. ধীমান গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, শ্বাসনালীতে সবসময়ই জীবাণু ঢুকছে। শরীরে একটা ব্যবস্থা আছে, যা জীবাণু প্রতিরোধ করে। যখন তার সংখ্যা অনেক বেশি হয়, তখন শরীর তা সামলে উঠতে পারে না। এই নেশাগুলো ইমিউনিটি ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কী করা উচিত? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হঠাৎ করে ইমিউনিটি বাড়ানো যায় না। এর কোনও ম্যাজিক ড্রাগ নেই।

কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইমিউনিটি বাড়ে। যেমন –
• সময়ে খাওয়া ও সুষম খাবার খাওয়া।
• নির্দিষ্ট সময় ভাল ঘুমের প্রয়োজন।
• ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি। বিএমআই যেন ২২-২৩ এর বেশি না হয়।
• প্রতিদিন কিছু কায়িক পরিশ্রম দরকার।

করোনা আবহে মদ্যপানের উপকারিতা নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে। মদ্যপান নিয়ে সেইসব ভুল ধারণা সরাসরি উড়িয়ে দেন বিশেষজ্ঞরা। পরিমিত মদ্যপান নয়, মদ্যপান ত্যাগের পরামর্শই দিলেন পালমনোলজিস্টরা।

সেইসঙ্গে ডা. পার্থসারথি ভট্টাচার্য আরেকটি বিষয়েও জোর দিলেন। অনেকেই আজকাল পথে-ঘাটে মাস্ক ব্যবহার করছেন। তাঁর মতে, মাস্ক পরবেন যাঁদের সর্দি কাশি হয়েছে তাঁরা।