কলকাতা: আশ্বিন মাসের এই শারদীয়া দুর্গাপুজো আসলে 'অকালবোধন'। কালিকা পুরাণ অনুসারে, রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় লঙ্কাজয়ের আগে শরৎকালে দুর্গার বোধন ও পুজো করেছিলেন রামচন্দ্র। কৃত্তিবাস ওঝা রামায়ণেও এ কথা উল্লেখ করেছিলেন। যদিও রামায়ণের প্রকৃত রচয়িতা বাল্মীকি মুনির লেখনীতে সে তথ্য পাওয়া যায় না বলেই দাবি পুরাণবিদদের। তাই দুর্গাপুজোর প্রবর্তন ও পুজার আচার উপাচারেও নানা মত রয়েছে। সারা বাংলাজুড়ে দুর্গা পুজোর রীতি নিয়ম এক একরকম।
তবে সাযুজ্যও রয়েছে। দুর্গাষষ্ঠীতে বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের পর সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নান হয়। শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী স্নান করানোর পর নবপত্রিকাকে নতুন শাড়ি পরানো হয়। তারপর পুজোমণ্ডপে নিয়ে এসে নবপত্রিকাকে দেবীর ডান দিকে স্থাপন করা হয় (অনেক ক্ষেত্রে এই আচারের ব্যতিক্রম থাকে)। নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপুজোর মূল অনুষ্ঠানটির প্রথাগত সূচনা হয়।
এই নবপত্রিকা হল দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীক, যা অবশ্যই কল্পিত। একটি সপত্র কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি সমূল সপত্র উদ্ভিদ একত্র করে একজোড়া বেল সহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি বধূর রূপ আনা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নামই কলাবউ। এই নবপত্রিকার মাধ্যমে দেবীর নয় রূপের পুজোঅর্চনা চলে।
যেমন-কলা গাছ বা রম্ভা: এর অধিষ্টাত্রী দেবী ব্রহ্মাণী; কচু গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কালিকা; হলুদ গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী উমা; জয়ন্তী গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কার্তিকী; বেল গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শিবা; ডালিম/বেদানা গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা, অশোক গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শোকরহিতা; মানকচু গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী চামুণ্ডা; ধান গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী লক্ষ্মী।
দেবীর এই রূপের কথা জানা যায় বপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ মন্ত্র থেকে। যেখানে বলা হয়েছে- "রম্ভাধিষ্ঠাত্রী ব্রহ্মাণী, কচ্বাধিষ্ঠাত্রী কালিকা, হরিদ্রাধিষ্ঠাত্রী উমা, জয়ন্ত্যাধিষ্ঠাত্রী কার্তিকী, বিল্বাধিষ্ঠাত্রী শিবা, দাড়িম্বাধিষ্ঠাত্রী রক্তদন্তিকা, অশোকাধিষ্ঠাত্রী শোকরহিতা, মানাধিষ্ঠাত্রী চামুণ্ডা ও ধান্যাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী"। এই নবপত্রিকার মাধ্যমে শস্যপূর্ণ বসুন্ধরাকে দেবীরূপে পুজো করা হয় বলেই মত শাস্ত্রবিদদের। যদিও অনেকের মতে, 'দেবীপুরাণে' এই নবপ্ত্রিকার কোনও উল্লেখ পাওয়া যায় না। যদিও কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণে (“বাঁধিলা পত্রিকা নব বৃক্ষের বিলাস।”) এবং পঞ্জিকাতে এর উল্লেখ রয়েছে।
মহাসপ্তমীর দিন নবপত্রিকা স্নানের পর মহাস্নান অনুষ্ঠিত হয় এবং এরপরই শুরু হয় মূল উপাচার। গুপ্ত প্রেস পঞ্জিকা মতে, এ বছর সপ্তমী তিথি আরম্ভ– ভোর ৪টে ০৩ মিনিট ০৫ সেকেন্ড। সপ্তমী তিথি শেষ– ২৫ আশ্বিন, মঙ্গলবার রাত ১টা ৪৬ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে। পূর্বাহ্ণ ৯টা ২৬ মিনিট ৫৭ সেকেন্ড মধ্যে কিন্তু বারবেলানুরোধে ৭টা ০১ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড মধ্যে। ফের ৮টা ২৮ মিনিট ৫৪ সেকেন্ড থেকে পূর্বাহ্ণ মধ্যে শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমী বিহিত পূজা প্রশস্তা।
তথ্যসূত্র-
কৃত্তিবাস ওঝা বিরচিত রামায়ণ,
গুপ্ত প্রেস পঞ্জিকা,
পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ
Durga puja 2021: নবপত্রিকা স্নানে সূচনা মহাসপ্তমীর, আজকের দিনের গুরুত্ব কতটা?
ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ
Updated at:
12 Oct 2021 12:11 AM (IST)
Edited By: Pallabi Dey
নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপুজোর মূল অনুষ্ঠানটির প্রথাগত সূচনা হয়। এই নবপত্রিকা হল দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীক, যা অবশ্যই কল্পিত।
এই নবপত্রিকার মাধ্যমে দেবীর নয় রূপের পুজোঅর্চনা চলে
NEXT
PREV
খবর (news) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
Published at:
12 Oct 2021 12:11 AM (IST)
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -