কলকাতা: সাধারণ নির্বাচনের সময় ভোটগ্রহণের জন্য ভারতে ব্যবহার করা হয় ইভিএম। তা নিয়ে নানা সময় অবিশ্বাস আর সন্দেহ প্রকাশ করেছে একাধিক রাজনৈতিক দল। ইভিএম হ্যাক করে ফল বদলে দেওয়া যায় বলে অভিযোগও জানানো হয়েছে। তা নিয়ে প্রায়শই তুমুল রাজনৈতিক টক্কর হতে দেখা যায়। এবার ইভিএম নিয়ে একই সন্দেহ প্রকাশ করতে গেল tesla, SpaceX- এর প্রধান এলন মাস্ক (Elon Musk)। তিনি ভোটগ্রহণের সময় ইভিএম মেশিন বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর দাবি, এই মেশিনগুলি হ্যাক করা সম্ভব। অন্তত সেই বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে। সারা বিশ্বেই যখন ইভিএমে ভোট-কারচুপির সংস্থা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছে, সেই সময়েই এমন বক্তব্য করলেন তিনি।
x হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন। 'আমাদের বৈদ্যুতিন ইভিএম ত্যাগ করা উচিত। যত ছোটই হোক, মানুষ বা AI এই মেশিন হ্য়াক করতেই পারে।'
অবশ্য মাস্ক এই বক্তব্য আর একজনের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে রেখেছন। মাস্কের X হ্যান্ডেল থেকে রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়ারের (Robert F Kennedy Jr) একটি পোস্ট শেয়ার করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন পুয়ের্তো রিকোর প্রাইমারি নির্বাচনের ঘটনার কথা জানিয়েছেন। সম্প্রতি ওই দেশে হওয়া নির্বাচনে ইভিএম জালিয়াতির অভিযোগ হয়েছে। পেপার ট্রেল দেখে সেটার ভিত্তিতে পরেন জেতা-হারা নির্ধারণ হয়েছ। পাল্টানো হয়েছে পুরনো ট্যালিও।
রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রে হলে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাইপো। উনি আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে একজন নির্দল প্রার্থী হওয়ার দৌড়েও আছেন। রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়ারের ওই পোস্টে লেখা, Peurto Rico-এর প্রাইমারি নির্বাচনে একাধিক গড়মিল দেখা গিয়েছে। সেই দেশে ইভিএম দিয়ে ভোটগ্রহণ হয়েছিল। এনডিটিভি-তে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলা হয়েছে, Associated Press-এর দাবি ইভিএম ব্য়বহার করলেও ওই দেশে ভোট-জালিয়াতির (evm hacking) অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু পেপার ট্রেইল ছিল, তাই ভোটে কারচুপি এড়ানো দিয়েছে। ওই পেপার ট্রেল থেকেই ভোটের কারচুপি এড়ানো গিয়েছে, ফলাফল ঠিক করা হয়েছে। পোস্টে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যদি পেপার ট্রেইল না থাকত তাহলে কীভাবে এই সমস্যা ঠিক হতো?
রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়ার দাবি করেছেন, এই সমস্যা এড়াতে পেপার ব্যালট ফিরিয়ে আনা হোক। তাহলে নির্বাচন কোনওরকম সমস্য়া ছাড়াই হবে।
আমেরিকায় ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, ভারতের ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু আলাদা। এখানে তৃতীয় জেনারেশনের (3rd gen evm) ইভিএম ব্যবহার করা হয়- যার পোশাকি নাম M3 EVM. বলা হয়ে থাকে এই মেশিনে কোনওরকম প্রভাব খাটানো যায় না। এখানে সেফটি মোড আছে- সেখানে ঢুকলে এই মেশিনে কোনওরকম কারিকুরি করতে গেলে অকেজো হয়ে যায়।
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা রাজীব চন্দ্রশেখর (Rajeev Chandrasekhar)। তাঁর দাবি, মাস্কের মন্তব্য আদতে 'huge sweeping generalization' এর সপক্ষে কারণও জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, 'ওই মন্তব্যের অর্থ বোঝায় যে কেউ নিরাপদ ডিজিটাল হার্ডওয়ার তৈরি করতে পারবে না। এটা ভুল।' তাঁর আরও দাবি, 'কোন সংযোগ নেই, ব্লুটুথ, ওয়াইফাই, ইন্টারনেট নেই। ফ্যাক্টরি প্রোগামড কন্ট্রোলার থাকে যাকে নতুন করে প্রোগ্রাম করা যায় না। ইভিএম ঠিকমতো তৈরি করা যায়, যেমন ভারত করেছে।' সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, 'আমরা হাতেকলমে শিক্ষা দিতেই পারি এলন'
এই বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধীও (Rahul Gandhi)। তিনি একটি খবরের কাটিং দিয়ে এবং মাস্কের পোস্ট উল্লেখ করে লিখেছেন, 'আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে গেলে গণতন্ত্র শেষ হয়ে যায়।'
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে (Supreme court on evm) মামলা হয়েছিল, যাতে একশো শতাংশ ক্ষেত্রে ভিভিপ্যাট স্লিপের সঙ্গে ইভিএম এর ফল মিলিয়ে দেখা হয়। শীর্ষ আদালত সেই দাবি খারিজ করেছিল, এখন যা নিয়ম চলে সেটাই বজায় থাকবে বলে জানিয়েছিল। যদিও নির্বাচন কমিশনকে বেশ কিছু নির্দেশ দিয়েছিল- তার মধ্যেই একটি হল দলের প্রতীক একবার লোড করার পরে ওই ইউনিট সিল করে নিরাপদ রাখতে হবে। তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করতে হবে। ফল বেরনোর পরে ৪৫ দিন পর্যন্ত সংরক্ষিত রাখতে হবে ইভিএম।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: বৃষ্টি বিপর্যয়ে সিকিমে আটকে ১২০০ পর্যটক! উদ্ধারে নামবে বায়ুসেনা