কলকাতা: ব্রিটিশ আমলের আইন। তা নিয়ে শোরগোল ভারত জুড়ে। কারণ ব্রিটিশ আমলের রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের ওপর (124A) আপাতত স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।


সুপ্রিম কোর্টের রায়:
পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের (124A) প্রয়োগ স্থগিত থাকবে। এই আইনে নতুন করে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। ইতিমধ্যেই এই আইন প্রয়োগ করে যে সমস্ত মামলা চলছে তা স্থগিত হয়ে যাবে। রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে যাঁরা জেলে বন্দি রয়েছেন, তাঁরা জামিনের আবেদন করতে পারবেন।


কিন্তু রাষ্ট্রদ্রোহ আইন কী?
ভারতীয় দন্ডবিধির (Indian Penal Code) ১২৪এ (124A) ধারা। এই আইনে বলা হয়েছে, লিখিত অথবা মৌখিক কোনও কথায় বা বাক্যে বা অঙ্গভঙ্গিতে বা অন্য যে কোনও ভাবে যদি এমন কিছু বোঝানো হয় যার দ্বারা ভারতে আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে কোনও অবমাননা বা হিংসা ছড়ানো হতে পারে বা হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করা হতে পারে তাহলে সেই ব্যক্তির শাস্তি হবে। শাস্তিস্বরূপ সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে। ভারতীয় দণ্ডবিধি কার্যকর হয় ১৮৬০ সালে। দশবছর পর, ১৮৭০ সালে এই ধারা যোগ করা হয়। বালগঙ্গাধর তিলক, মহাত্মা গাঁধী, ভগৎ সিং, জওহরলাল নেহরুর মতো নেতাদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ ভারতে এই আইন প্রয়োগ করা হয়েছিল।


আইন কমিশনের পরামর্শ:
২০১৮ সালে ল কমিশনের (Law Commission) তরফে পরামর্শ দেওয়া হয়।  সেখানে বলা হয় ১২৪এ  (124A) ধারা তখনই দেওয়া যাবে, যখন কোনও ঘটনার পিছনে আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করার চেষ্টা থাকবে। ভারতের সরকারকে হিংসা ও বেআইনিভাবে উৎখাতের চেষ্টা করা হবে, তখনই এই ধারা দেওয়া যাবে। গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য নীতি-নির্ধারণে তর্কবিতর্ক প্রয়োজন। আর সেই কারণেই সমালোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে বাক স্বাধীনতায় কোনও হস্তক্ষেপের আগে সতর্ক দৃষ্টি প্রয়োজন বলে পরামর্শ দেওয়া হয়। 


দীর্ঘ আলোচনা:
ব্রিটিশ শাসিত ভারতে মূলত স্বাধীনতা আন্দোলন দমানোর জন্য রাষ্ট্রদ্রোহ আইন (Sedition Law) আনা হয়েছিল। কিন্তু, স্বাধীন ভারতে এই আইনের গুরুত্ব কতটা তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষক-ছাত্র-গবেষক থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকেই এই প্রশ্ন উঠেছে। যখন শাসনে যে দলই থেকেছে, তাদের বিরুদ্ধে বিরোধী কণ্ঠস্বর দমানোর জন্য় রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন তৎকালীন বিরোধীরা। গত এক দশকের তথ্য চোখ রাখলে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবং NCRB’র ২০১৯-২০’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ভারতে ১০ হাজার ৯৩৮ জনের বিরুদ্ধে ৮১৬টি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে। তার মধ্যে ৬৫ শতাংশ মামলা হয়েছে ২০১৪ সালের পর। 


দোষী সাব্যস্ত কতজন:
এই বিপুল পরিমাণ মামলার পরে দোষী কতজন হয়েছেন? মামলাগুলির পরিস্থিতিই বা কীরকম? ২০১৪ থেকে ২০২০ পর্যন্ত মামলার ছবি দেখলেই তা স্পষ্ট হবে। দোষী সাব্যস্তের (Conviction Rate) হার মাত্র আড়াই শতাংশ।




সম্প্রতি এই বছর ২৪ এপ্রিল, মহারাষ্ট্রের অমরাবতীর সাংসদ নভনীত রানা (Navneet Rana) এবং তাঁর স্বামী বিধায়ক রবি রানার (Ravi Rana) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের ব্যবহার করেছিল মুম্বই পুলিশ।  


বিশ্বে আরও কোথাও এই আইন রয়েছে? এখন ভারতের পাশাপাশি এই আইন রয়েছে সৌদি আরব, সুদান, ইরানে।


যদিও এই আইনে 'না' বলেছে বহু দেশ:
ব্রিটেন (Britain): ২০০৯ সালে এই আইন রদ হয়।
অস্ট্রেলিয়া (Australia): ২০১০ সালে সংশোধনী এনে আইন থেকে রাষ্ট্রদ্রোহ বা সেডিশন কথাটি তুলে দেওয়া হয়
স্কটল্যান্ড (Scotland): ২০১০ সালে এই আইন তুলে নেওয়া হয়।
দক্ষিণ কোরিয়া (South Korea): ১৯৮৮ সালে সংস্কারের সময় রাষ্ট্রদ্রোহ আইন রদ করে দেওয়া হয়।
ইন্দোনেশিয়া (Indonesia): ২০০৭ সালে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে অসাংবিধানিক আখ্যা দেওয়া হয়। বলা হয়েছিল, ডাচ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় তাদের মাধ্যমেই এই আইন এসেছিল। 


আরও পড়ুন:    CAA অসাংবিধানিক, বাদল অধিবেশনেই বাতিল হোক', শাহকে চিঠি অধীরের