কলকাতা: একেবারে নিশ্চিহ্ন না হলেও, চিরাচরিত গ্রাম্য জীবন বলতে যা বোঝায়, তা কার্যত উধাও হয়ে যেতে বসেছে। ঝিঁঝির ডাক, বর্ষায় ব্য়াঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর এখন কার্যতই বিস্মৃত হওয়ার পথে (Science News)। আঁধার রাতে জোনাকির দেখা মেলে না বহুদিন ধরেই।  তাকে ঘিরে এবার আশঙ্কার খবর সামনে এল। পৃথিবীর বুক থেকে জোনাকি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলে সামনে এল দাবি (Fireflies Extinction)।


বর্তমান প্রজন্মকে বাদ দিলেও, ৪০-৫০ বছর বয়সিরাও শেষ বার কবে জোনাকি দেখেছেন, হয়ত মনে করতে পারবেন না। নেহাতই বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়, বরং এর নেপথ্যে রয়েছে বৈজ্ঞানিক কার্যকারণ। আগামী কয়েক প্রজন্মের মধ্যেই পৃথিবীর বুক থেকে জোনাকি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে সম্প্রতি একটি গবেষণার রিপোর্টে উঠে এসেছে।


আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা Xerces Society এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সংগঠন (International Union for Conservation of Nature)সম্প্রতি জোনাকিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কার বাণী শুনিয়েছে। পৃথিবীর বুকে যে সমস্ত প্রাণীর নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে, তার একটি লালতালিকা প্রকাশ করেছে তারা। তাতে বলা হয়েছে, মোট ১২৮ প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে ১১ শতাংশ নিশ্চিত ভাবে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। নিশ্চিহ্ন হওয়ার দিকে এগোচ্ছে ২ শতাংশ।


আরও পড়ুন: Viral Pic: উন্মুক্ত দুই বাহু, স্কন্ধে রক্তিম বর্ণ চন্দ্রমা, প্রায়শ্চিত্তকারী রূপে ধরা দিলেন, মুহূর্তে ভাইরাল জিশু


জোনাকিদের নিশ্চিহ্ন হওয়ার জন্যও দূষণকে দায়ী করছেন গবেষকরা। বাকনেল ইউনিভার্সিটির  জীববিজ্ঞনের অধ্যাপক সারা লোয়ার বিগত ১৩ বছর ধরে জোনাকি নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি জানিয়েছেন, জোনাকিদের নিশ্চিহ্ন হতে বসার নেপথ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হল আলোক দূষণ।


জোনাকির শরীরে আলো জ্বলা আসলে একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া। এদের শরীরের পিছনের অংশে একটি চৌকো জায়গা রয়েছে, তার মধ্যেই বিক্রিয়া ঘটে। লুসিফেরিন নামের একটি রাসায়নিক এবং লুসিফেরাস নামক এনজাইমের উপস্থিতিতে অক্সিজেন এবং শক্তির ব্যবহারে আলো উৎপন্ন হয়। অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত থাকলে আলো জ্বলে, বন্ধ থাকলে নিভে যায়।


সারা জানিয়েছেন, শরীরের এই আলো দেখেই বিপরীত লিঙ্গের জোনাকি পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। লিপ্ত হয় সঙ্গমে। আলো দেখেই পছন্দের সঙ্গী খুঁজে নেয় তারা। পুরুষ জোনাকি সঙ্গী খুঁজতে প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে একবার আলো জ্বালায়। স্ত্রী জোনাকিরা প্রতি দুই সেকেন্ড অন্তর।  কিন্তু আজকাল রাস্তাঘাট, বাড়িঘর সবসময় যেভাবে আলোকিত থাকে, তাতে বিভ্রান্ত হয় জোনাকিরা। ফলে অন্য় দিক থেকে সঙ্গমের ইঙ্গিত এলেও বুঝে উঠতে পারে না। ফলে জোনাকির বংশবৃদ্ধিও আটকে যায়।


উত্তর আমেরিকায় জোনাকির তিন-তিনটি প্রজাতি বিলুপ্তির পথে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, মূলত ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা পছন্দ জোনাকিদের। জলাধারের আশেপাশের জায়গা বিশেষ করে। যেখানে তাপমাত্রা কম, সেখানে হালকা আলো দেখেই পরস্পরকে চিনতে পারে জোনাকিরা। শুষ্ক এলাকায় আবার আলো হয় জোরাল। কিন্তু বর্তমানে তাপমাত্রার ওঠাপড়ায় তাদের ইন্দ্রিয়কেও প্রভাবিত করছে।


এ ছাড়াও, সরাসরি মানুষই জোনাকিদের অস্তিত্বসঙ্কটে ফেলে দিচ্ছেন বলেও দাবি গবেষকদের একাংশের। তাঁরা জানিয়েছেন, গাছ-গাছালির পাতা খাওয়ার সময় তাতে ব্যবহৃত কীটনাশক, সারও জোনাকিদের পেটে চলে যায়। তাই কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে এনে, রাত নামলে আলো বন্ধ রেখে জোনাকিদের কয়েকটি প্রজাতিকে বাঁচানোর চেষ্টা করা যেতে পারে বলে মত তাঁদের।


জোনাকিদের আয়ুকে মোট চারটি ধাপে ভগ করা হয় সাধারণত, ডিম, লার্ভা, পিউপা এবং প্রাপ্তবয়স্ক।  সাধারণত কয়েক মাস, এমনকি এক-দু’বছরও বেঁচে থাকতে পারে জোনাকিরা। কিন্তু আমেরিকার উত্তরে জোনাকিদেক আয়ুকাল কয়েক সপ্তাহে এসে ঠেকেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।