মুম্বই: বাকি জীবনটা কি তা হলে জেলে কাটবে মুম্বই পুলিশের একসময়ের দাপুটে 'এনকাউন্টার স্পেশ্যালিস্ট' প্রদীপ শর্মার? সে কথা সময় বলবে। তবে আজ, মঙ্গলবার, বম্বে হাইকোর্ট, ২০০৬ সালের একটি ভুয়ো এনকাউন্টার মামলায় অপরাধী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে মুম্বই পুলিশের এই অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিককে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ থাকছে। কিন্তু সেসব পরবর্তী ঘটনা। আপাতত, দেশের বাণিজ্য রাজধানীর বুকে শিহরণ। কারণ, যে মামলায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, সেটিতে মারা গিয়েছিল রামনারায়ণ গুপ্তা ওরফে লক্ষ্মণ ভাইয়া। গ্যাংস্টার ছোটা রাজন-র অতি ঘনিষ্ঠ বলেই মুম্বইয়ে আনাচে-কানাচে পরিচিত ছিল সে। 


হাইকোর্ট যা বলল...
বম্বে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এদিন তাদের রায়ে বলে, 'শর্মার বিরুদ্ধে যে অকাট্য প্রমাণ ছিল তা এড়িয়ে গিয়েছিল ট্রায়াল কোর্ট। পর পর যে প্রমাণের সূত্র রয়েছে, তা মেলালে নির্ভুলভাবে এই মামলায় ওর যোগ প্রমাণিত হয়।' ২০১৩ সালে সেশনস কোর্ট যে প্রদীপ শর্মাকে মুক্তি দিয়েছিল, এদিন সেই রায় খারিজ করে বম্বে হাইকোর্ট। প্রদীপ শর্মাকে অপরাধী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবনের শাস্তি দেয়।  তিন সপ্তাহের মধ্যে সেশনস কোর্টের সামনে তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। পাশাপাশি যে ১৩ জনকে ট্রায়াল কোর্ট যাবজ্জীবন দিয়েছিল, সেই রায় বহাল রাখে হাইকোর্ট। যদিও অন্য ছজনকে মুক্তি দেওয়া হয়। 


ফিরে দেখা...
২০০৬ সালের নভেম্বর মাসের মুম্বইয়ের ভারসোভা এলাকার 'নানা নানি পার্ক' চত্বরে ভুয়ো এনকাউন্টার করা হয় লক্ষ্ণণ ভাইয়ার। অভিযোগকারীর তরফের বর্ষীয়ান আইনজীবী, রাজীব চহ্বান, বম্বে হাইকোর্টে দাবি করেছেন, ২০০৬ সালের ১১ নভেম্বর লক্ষ্ণণ ভাইয়া এবং তার বন্ধু অনিল ভেদাকে প্রথমে ভাসি এলাকা থেকে অপহরণ করেছিল মুম্বই পুলিশের একটি টিম। তার পর ভুয়ো এনকাউন্টার করে মারে। অন্য দিকে, পুলিশের দাবি, ৩৮ বছরের লক্ষ্মণ রীতিমতো দাগী অপরাধী ছিল। তোলাবাজি, খুনের চেষ্টা এবং খুনের একাধিক মামলা তার বিরুদ্ধে দায়ের করা ছিল। 
মামলাটির শুনানিতে মুম্বই সেশনস কোর্ট অবশ্য মূল অভিযুক্ত প্রদীপ শর্মাকে মুক্তি দেয়। তবে আরও এক এনকাউন্টার স্পেশ্যালিস্ট, প্রদীপ সূর্যবংশী-সহ বেশ কয়েকজন পুলিশ আধিকারিক, বেসরকারি লোকজনকে যাবজ্জীবনের সাজা দেওয়া হয়। তবে নিহতের ভাই এবং আইনজীবী, রামপ্রসাদ গুপ্তা হাইকোর্টে একটি আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে তদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ১১ আগস্ট, সেই তদন্ত রিপোর্টেই দাবি করা হয়, এনকাউন্টারের দাবি সম্পূর্ণ 'ভুয়ো', আসলে ঠান্ডা মাথায় 'খুন' করা হয়েছিল লক্ষ্ণণ ভাইয়াকে।
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে 'সিট' গঠন করে দেয় বম্বে হাইকোর্ট। আইপিএস অফিসার কেএমএম প্রসন্নকে বিষয়টির তদন্ত করতে বলা হয়। ২০১০ সালের এপ্রিলে সিট রিপোর্ট দেয়, যে জনার্দন ভাঙ্গে নামে এক রিয়েল এস্টেট এজেন্ট প্রদীপ শর্মা এবং  প্রদীপ সূর্যবংশীকে এই 'খুনের' জন্য ভাড়া করেছিল। লক্ষ্মণ ভাইয়ার সঙ্গে তার জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ দেখা দেওয়ায় তাকে হঠাতে এই কন্ট্র্যাক্ট দেওয়া হয় বলে খবর। কিন্তু অদ্ভুতভাবে সাক্ষ্য দেওয়ার আগেই, ২০১১ সালে গায়েব হয়ে যান অনিল ভেদা। পরে তাঁর পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। এর পর ট্রায়াল কোর্টের রায় আসে। সেই রায়ের বিরুদ্ধে বম্বে হাইকোর্টে আবেদন জানানো হয়েছিল। 


আরও পড়ুন:'ভিত্তিহীন' ও 'অবাস্তব', অরুণাচল নিয়ে চিনার দাবি পাল্টা দিল ভারত