নয়াদিল্লি: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের শারীরিক অবস্থার অবনতি। দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হল তাঁকে। মনমোহনের বয়স ৯২ বছর। তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে বলে খবর সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে। বৃহস্পতিবার বিকেলে আচমকাই মনমোহনের স্বাস্থ্যের অবনতি হয় বলে খবর। তড়িঘড়ি AIIMS-এ ভর্তি করা হয় তাঁকে।
আচমকা কী ঘটল, যার জন্য নবতিপর মনমোহন সিংহকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে হাসপাতাল সূত্রে খবর, শ্বাসকষ্ট রয়েছে মনমোহনের। হাসপাতালে ICU-তে এই মুহূর্তে রাখা হয়েছে তাঁকে। সেখানে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তিনি। কংগ্রেসের তরফে এখনও পর্যন্ত মনমোহনের স্বাস্থ্য নিয়ে কিছু জানানো হয়নি। (Manmohan Singh Critical) তবে ইতিমধ্যেই AIIMS-এ পৌঁছে গিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। রাহুল গাঁধী, মল্লিকার্জুন খড়গেও পৌঁছেছেন হাসপাতালে। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাও পৌঁছেছেন।
২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত, দু'দফায় দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। রাজ্যসভায় দীর্ঘ ৩৩ বছরের রাজনৈতিক কেরিয়ারে ইতি পড়ে তাঁর। দেশের একমাত্র শিখ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন। ১৯৯১ সালে রাজ্যসভায় প্রথম বার প্রবেশ করেন তিনি। এর চার মাস পর, পি ভি নরসিংহ রাওয়ের সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
অসম থেকে পাঁচ বার রাজ্যসভায় প্রতিনিধিত্ব করেন মনমোহন। ২০১৯ সালে সরে যান রাজস্থানে। শেষ বার নোটবন্দির বিরুদ্ধে সংসদে সরব হতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। নরেন্দ্র মোদি সরকারের নোটবন্দিকে 'সংগঠিত লুঠ' বলে উল্লেখ করেন। ২০২৩ সালে হুইলচেয়ারে বসে সংসদের অধিবেশনে যোগ দেন তিনি। রাজধানীর সীমানা সংশোধন বিলের ভোটাভুটিতে অংশ নিয়েছিলেন।
১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত পঞ্জাবের গাহ্-তে শিখ পরিবারে জন্ম মনমোহনের, যা বর্তমানে পাকিস্তানের অংশ। ছোট বয়সে মাকে হারান। ঠাকুমার কাছেই মানুষ মনমোহন। প্রথমে উর্দু মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষা। গুরুমুখী, পাঞ্জাবিও জানতেন। দেশভাগের পর ভারতের অমৃতসরে চলে আসে মনমোহনের পরিবার। সেখানে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন তিনি। পঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজে অর্থনীতি নিয়ে এর পর পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে নজির গড়েন। ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্টে DPhil করেন মনমোহন। দেশে ফিরে বেশ কয়েক বছর অধ্যাপনা করেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপুঞ্জের বাণিজ্য এবং উন্নয়ন বিভাগে যোগ দেন। ১৯৮২ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার গভর্নর নিযুক্ত হন মনমোহন। সেই সময় অর্থমন্ত্রী ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
প্ল্যানিং কমিশনের চেয়ারম্যান, সাউথ কনিশনের সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব সামলানোর পর জেনিভার একটি থিঙ্কট্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ হিসেবেও কাজ করেছেন। ১৯৯১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যআন হন মনমোহন। এর পর ১৯৯১ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ। মনমোহনের হাতেই ভারত মুক্ত অর্থনীতি হয়ে ওঠে।
যে দু'ফায় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ২০০৭ সালে তাঁর আমলেই ভারতের GDP সর্বোচ্চে গিয়ে ঠেকে, ৯ শতাংশে। পৃথিবীর দ্বিতীয় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে উঠে আসে ভারত। ১০০ দিনের কাজের পরিকল্পনাও মনমোহন সরকারের আমলে।