কলকাতা: আমদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ধ্বংসে এখনও রহস্য রয়েছে। উড়ানের ২৭ সেকেন্ডেই কীভাবে দুর্ঘটনা? কেন স্বপ্নের উড়ানের ভয়ঙ্কর পরিণতি? বিমান বিপর্যয়ে মৃত্যুমিছিলের পর এই প্রশ্ন উঠে আসছে বারবার। ইতিমধ্যেই সরকারিভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এর পাশাপাশি বিমান বিশেষজ্ঞদের মতামত উঠে আসছে।
যেমন প্রাক্তন মার্কিন নৌবাহিনীর পাইলট এবং বিমান বিশেষজ্ঞ ক্যাপ্টেন স্টিভ শেইবনার দাবি করেছেন, Dual Engine Failure হয়েই এক ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। বেশ কিছু কারণ ও প্রমাণও তিনি দেখিয়েছেন। তবে এ ধরনের বিমান বিপর্যয়ের অন্যান্য কারণের কথাও তিনি একটি ভিডিওতে জানিয়েছেন।
যেমন- Loss Of Power- অনেক সময়ই হয় ইঞ্জিনে পাখি ঢুকে পড়ে। আবার অনেক সময় ফুয়েল কন্টামিনেশন অর্থাৎ জ্বালানিতে সমস্যা হয়। যার ফলে Dual Engine Failure হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত, No Flaps On Take Off- অনেকসময় বিমানের ডানায় যে ফ্ল্যাপ থাকে, সেটিকে সঠিকভাবে চালনা করতে ব্যর্থ হন পাইলট। সেটি বন্ধ না থাকলে টেক অফের পর ভারসাম্য হারায় বিমানটি এবং কিছুদূর গিয়ে ভেঙে পড়তে পারে। তৃতীয়ত, Flaps Retracted Prematurely- বেশ কিছু ক্ষেত্রে সময়ের আগে ফ্ল্যাপটিকে বন্ধ করার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা ঘটে যখন একজন পাইলট গিয়ার আপ প্রসেসে থাকে আর অপরজন ভুল করে সময়ের আগে ফ্ল্যাপ রিট্র্যাকশন করে দেন।
ক্যাপ্টেন স্টিভের মতে, 'ইঞ্জিনের সমস্যার জন্য এভাবে ফ্লাইটটি ভেঙে পড়েছে এটা আমার মনে হচ্ছিল না প্রথমে। কারণ কোনও আগুন নেই, কোনও পাখি ঢুকে গিয়েছে সেখানে তেমন কিছুই দৃশ্যমান নয়। তাই এর পর আমার প্রথমে মনে হচ্ছিল হয়তো ফ্ল্যাপ অন- ফ্ল্যাপ অফের বিষয়টি এর নেপথ্যের কারণ হতে পারে। কিন্তু এখন যে ভিডিও আমার কাছে এসেছে। সেটা দেখে আমার ভাবনাই বদলে গিয়েছে।'
কী কী হতে পারে সেই বিষয়টি ভিডিও দেখে বিশ্লেষণ করেন ক্যাপ্টেন স্টিভ। একটি ফ্রেম দেখিয়ে তিনি বলেন যে টেক অফের পর পরই বিমান থেকে RAT Deploy করা হয়। RAT অর্থাৎ Ram Air Turbine। এই ধরনের ঘটনা বিমানে Power Failure এর ফলে হয়ে থাকে। সেই সময় এই RAT Deployment হয়।
বিমানের কোন অংশে থাকে এটি?
ক্যাপ্টেন স্টিভের কথায়, 'বিমানের ডান দিকে ডানার পিছনে একটি ছোটো দরজার মতো অংশ থাকে। সেখানেই থাকে এই RAT। এটি দুই ব্লেড বিশিষ্ট পাখার মতো দেখতে হয় কিছুটা। এর কাজ হল চূড়ান্ত আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরি হলে বিমানে সেই সময় ইলেক্ট্রিকাল এবং হাইড্রোলিক প্রেসার তৈরি করে দেওয়া।
এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭-এ কেন এটি হল?
ক্যাপ্টেন স্টিভের মতে, 'এক্ষেত্রে RAT Deployment হওয়ার তিনটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, বিরাট ইলেক্ট্রিকাল গোলযোগ হয়েছিল, দ্বিতীয়ত, বিরাট হাইড্রোলিক সমস্যা হয়েছিল, তৃতীয়ত, দুটি ইঞ্জিনই কার্যক্ষমতা হারিয়েছিল। এর মধ্যে যেকোনও একটা হয়ে থাকতে পারে। যদিও আমার মনে হচ্ছে Dual Engine Failure হয়েছে এক্ষেত্রে।'
কিন্তু ইঞ্জিন খারাপ হয়েই RAT Deployment হয়েছে এটা কতটা নিশ্চিত?
বিমান বিশেষজ্ঞ ক্যাপ্টেন স্টিভের মতে, 'ভিডিওতে এটা স্পষ্ট যে বিমানের ডানদিকের অংশ থেকেই এটি বেরিয়েছে। যেখানে এটি থাকার কথা। আর শব্দ। RAT Deployment হলে একটি আলাদা ধরনের শব্দ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও সেটা কানে আসল। যদি মূল ভিডিওটি চোখে না দেখে শুধু শোনা যায়, তাহলে মনে হবে যেন কোনও ছোট সিঙ্গল ইঞ্জিন এয়ারক্রাফট বেরিয়ে যাচ্ছে মাথার উপর দিয়ে। কিন্তু বোয়িং ড্রিমলাইনার তা নয়।
তিনি এও বলেন, এই বিমান দুর্ঘটনা যে ইঞ্জিন বিকলের ফলেই হয়েছে তার আরেকটি তথ্য হল- এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র ব্যক্তির বয়ান। বিশ্বাস কুমার রমেশ সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, 'টেক অফের পরই ৫ থেকে ৭ সেকেন্ডের জন্য মনে হয়েছিল বিমানটি আটকে গিয়েছে কোথাও। এরপর ফ্লাইটের মধ্যে সবুজ আর সাদা আলো জ্বলে উঠেছিল। এরপর মনে হল প্লেনটি বেশ কিছুটা জোরে ওড়ার চেষ্টা করছে। গাড়ি যেমন আটকে গেলে রেস দিয়ে থাকি, কিছুটা সেরকম'। এই তথ্যটি উদ্ধৃত করেই ক্যাপ্টেন স্টিভ বলেন, 'এই যে তিনি বললেন যে বিমানের মধ্যে আলো জ্বলে উঠেছে, আর গাড়িতে জোর করে রেস দেওয়ার মতো আওয়াজ হয়েছে, এর অর্থ হল সেই সময়ই বিমানে RAT Deployment হয়েছিল।'
আর ইঞ্জিন বিকলের সর্বশেষ তথ্য হিসেবে ক্যাপ্টেন স্টিভ রাখেন, পাইলটের 'Mayday' কলটিকে। একাধিক রিপোর্টে বলা হয়েছে পাইলট বলেছিলেন, 'Mayday...No Power'। ফলে অভিজ্ঞ এই বিমান বিশেষজ্ঞের কথায়, দুটি ইঞ্জিন বিকল হয়েই ভারতের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিমান বিপর্যয়টি ঘটেছে।
তবে ঠিক কী কারণে এই দুর্ঘটনা? কী ত্রুটি তা বিশ্লেষণ করে দেখতে ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ভারত সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে এই কমিটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তদন্ত করবে। এই কমিটিতে একদিকে যেমন থাকছেন আমদাবাদের পুলিশ কমিশনার ও তাঁর অ্যান্টি টেররিজিম স্কোয়াডের স্পেশাল টিম, তেমনই ভারতের সর্বোচ্চ গুপ্তচর সংস্থা আইবির স্পেশাল ডিরেক্টরও। কমিটির সদস্য হবে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ টিম। এর পাশাপাশি উদ্ধার করা ২টি ব্ল্যাক বক্সের একটি থেকে কী তথ্য পাওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সম্পূর্ণ ভিডিওটি দেখুন-