নয়াদিল্লি: রাশিয়ার থেকে তেল কেনার জন্য ভারতকে ‘শুল্ক-শাস্তি’ দিয়েছেন। অথচ রাশিয়ার থেকে তেল কেনা চিনের প্রতি তাঁর অবস্থান নরম। এই আবহে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন জয়ের রাস্তা বাতলে দিলেন সেদেশেরই প্রাক্তন নিরাপত্তা উপদেষ্টা, ট্রাম্পের একদা ঘনিষ্ঠ জন বল্টন। তাঁর দাবি, নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পকে মনোনীত করা উচিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। একবার নয়, দু’-দু’বার ট্রাম্পকে মনোনীত করা উচিত। (John Bolton)
দ্বিতীয় বার আমেরিকার মসনদে ফেরার পর থেকেই ভারতের প্রতি কড়া মনোভাব ব্যক্ত করে চলেছেন ট্রাম্প। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত নিয়ে তাঁর মন্তব্যে যেমন অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে দিল্লিকে, তেমনই রাশিয়ার থেকে তেল কেনার জন্য ভারতের ঘাড়ে দু’দফায় ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন তিনি। হঠাৎ ভারতের প্রতি এত রুষ্ট হলেন কেন ট্রাম্প, মোদির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে ছেদই বা পড়ল কেন, প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। (Donald Trump)
সেই আবহেই ট্রাম্পের মনজয়ের রাস্তা বাতলে দিলেন বল্টন। ভারতের উপর চড়া শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত ‘ভুল’ বলেই মত বস্টনের। তাঁর মতে, ট্রাম্পের আচরণে ভারত ও আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর আগে, আমেরিকা চিনের উপর ১৪৫ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা করলেও, সেই শুল্ক কার্যকর হয়নি আজও। বরং শীঘ্রই বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী ট্রাম্প। তাই একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বল্টন বলেন, “চিনের উপর শুল্ক বা দ্বিতীয় কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। বরং ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিকে সামনে রেখে ট্রাম্প যে যে পদক্ষেপ করেছেন, তাতে ভারত সরকারই সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে। গত ৩০ দিন ধরে ভারতের সঙ্গে হোয়াইট হাউস যে অন্যায় আচরণ করছে, এতে আগের মতো বিশ্বাস, ভরসা ফিরিয়ে আনতে অনেক সময় লেগে যাবে।”
আর সেই কারণেই নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পের নাম সুপারিশ করা উচিত বলে ভারতকে পরামর্শ দেন বল্টন। ভারতের সঙ্গে সংঘাত পর্ব মিটতেই নোবেলের জন্য ট্রাম্পের নাম পাঠায় পাকিস্তানের শেহবাজ শরিফ সরকার। বল্টনের মতে, “শেহবাজ এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির ট্রাম্পকে তুষ্ট করার রাস্তা বের করে ফেলেছেন। আমি বলব, নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য দু’বার ট্রাম্পের নাম সুপারিশ করুন প্রধানমন্ত্রী মোদি।”
নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রতি নিজের আগ্রহ নিয়ে কোনও লুকোছাপা নেই ট্রাম্পের। নিজেকে নোবেল পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বার বার তুলে ধরেছেন তিনি। এমনকি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘যুদ্ধ’ থামিয়ে অসাধ্যসাধন করেছেন বলেও দাবি শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। জুন মাসে পাকিস্তানের তরফে ট্রাম্পকে নোবেলের জন্য মনোনীত করার ঘোষণা হয়। তাই ভারতও সেই পথে হাঁটতে পারে বলে মত বল্টনের। নোবেল পুরস্কারই ট্রাম্পের মনজয়ের রাস্তা, এমন দাবি আগেও করেছেন তিনি। বল্টনের দাবি, নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে মরিয়ে হয়ে উঠেেছেন ট্রাম্প। বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও। যে কারণে তিনি পর্যন্ত ট্রাম্পের নাম সুপারিশ করেছেন। তবে বল্টন পরামর্শ দিলেও, নোবেলের জন্য ট্রাম্পে মনোনীত করার কোনও ইঙ্গিত এখনও পর্যন্ত দেয়নি ভারত সরকার।
আমেরিকার প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বল্টনের সঙ্গে একসময় দহরম মহরম ছিল ট্রাম্পের। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবেও ধরা হতো বল্টনকে। কিন্তু যত সময় এগিয়েছে, ট্রাম্প সরকারের একাধিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বল্টন, যার ফলে সম্পর্কেও ছেদ পড়েছে। বল্টনকে সম্প্রতি 'মূর্খ' বলেও উল্লেখ করেন ট্রাম্প।