নয়াদিল্লি: মেয়ের ধর্ষণকারীদের ক্ষমা করে দিতে অনুরোধ করা ইন্দিরা জয়সিংহকে তীব্র আক্রমণে বিদ্ধ করার জন্য বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতকে সাধুবাদ জানালেন নির্ভয়ার মা আশাদেবী। তিনি বলেন, অন্তত কেউ আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন দেখে আমি খুশি।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে আশাদেবী বলেন, আমি খুশি যে কেউ অন্তত ইন্দিরা জয়সিংহের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। কেউ আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। কঙ্গনা দাবি করেছিলেন, চারজনকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া উচিত। বলেন, ফাঁসি যদি দৃষ্টান্তমূলক না হয়, তাহলে ফাঁসি দিয়ে লাভ কী? চুপিসাড়ে নয়, প্রকাশ্যে ফাঁসি হওয়া উচিত এই বর্বরদের।
কঙ্গনার এই দাবিকে বাহবা দিয়েছেন আশাদেবী। নির্ভয়া মা জানান, তিনি কঙ্গনার মন্তব্যকে পূর্ণ সমর্থন করছেন। বলেন, ভবিষ্যতে এধরনের ঘৃণ্য ঘটনা রুখতে একটা উদাহরণ চাই। প্রকাশ্যে ফাঁসি হলে, অপরাধপ্রবণতা অনেকটা কমবে। আশাদেবী আরও বলেন, একমাত্র তিনিই বুঝতে পারছেন, ওই ঘটনার সময় তাঁর মেয়ের ওপর দিয়ে কী বয়ে গিয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, যখন ওই পৈশাচিক ঘটনা ঘটছিল, তখন কোথায় ছিলেন এঁরা(ইন্দিরা জয়সিংহ)?
ইন্দিরা জয়সিংহকে আক্রমণ করে কঙ্গনা বলেছিলেন, এধরনের কথা বলার জন্য ইন্দিরাকে ওই চারজনের সঙ্গে চারদিনের জন্য আটকে রাখা উচিত। এটা দরকার। উনি কী ধরনের মহিলা যিনি ধর্ষকদের প্রতি সহমর্মিতা দেখান? অভিনেত্রী আরও জানান, ইন্দিরার মতো মানুষরাই ‘দানবদের জন্ম দেন’। বলেন, যে সকল মহিলারা ধর্ষক ও হত্যাকারীদের প্রতি ভালবাসা ও সহমর্মিতা দেখান, তাঁরাই ওদের জন্ম দেন। এই প্রেক্ষিতে আশাদেবী বলেন, তিনি কঙ্গনার এই মন্তব্যকেও সমর্থন করছেন। বলেন, উনি (কঙ্গনা) কোনও ভুল কিছু তো বলেননি।
নির্ভয়াকাণ্ডের দোষীদের সাজা বারবার পিছিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভপ্রকাশ করেন নির্ভয়ার মা। বলেন, বিচার চলছে তো চলছেই। এভাবে দোষীরা এক-এক করে প্রাণভিক্ষার আবেদন করছে। আর সাজার দিন পিছিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, তিনি সাত বছর ধরে দোষীদের ফাঁসির অপেক্ষা করছেন।
এই প্রেক্ষিতে দোষীদের ক্ষমা করতে নির্ভয়ার মাকে অনুরোধ করেন প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ। ট্যুইটারে তিনি লেখেন, আমি আশাদেবীর কষ্ট বুঝতে পারছি। তা সত্ত্বেও, আমি তাঁকে বলব, সনিয়া গাঁধীর পথ অনুসরণ করতে। তিনি যেমন নলিনীকে ক্ষমা করেছেন, তেমনই আশাদেবীর উচিত ওই চারজনকে ক্ষমা করা। আমরা সকলেই আপনার সঙ্গে আছি, কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে।
প্রসঙ্গত, নির্ভয়া গণধর্ষণ ও হত্যা মামলার দোষী সাব্যস্তরা ফাঁসির পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত। কিন্তু, সাজাপ্রাপ্তরা প্রাণভিক্ষার আবেদন করায় সেই পরোয়ানা খারিজ করে দেওয়া হয়। জারি করতে হয় নতুন পরোয়ানা।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে ২৩-বছরের নির্ভয়াকে ধর্ষণ ও হত্যা করে ৬ জন। ১০ দিন পর সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মারা যান নির্ভয়া। এই ঘটনায় এক নাবালক সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। জুভেনাইল হোমে তিন বছর কাটিয়ে বেরিয়ে যায় নাবালক। এক সাজাপ্রাপ্ত জেলে আত্মহত্যা করে। বাকি চারজন ফাঁসির দিন গুণছে।