নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের আগে জোটের নামকরণে চমক তৈরি করেছেন বিরোধীরা। বিজেপি বিরোধী শিবিরের নয়া নামকরণ হয়েছে I.N.D.I.A. দেশের নামে বিরোধী জোটের এই নামকরণ ঘিরে রাজনৈতিক তরজা হতে সময় লাগেনি। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন একাধিক বার (President of Bharat Row)। দেশের নামে ব্যবহার করলেই হয় না, মুজাহিদিনের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের নামেও INDIA রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সেই আবহেই এবার নয়া বিতর্ক শুরু হল।
কারণ জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর তরফে যে নিমন্ত্রণপত্র গিয়েছে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে, তাতে ইংরেজিতে 'প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া'র (President of India) পরিবর্তে 'প্রেসিডেন্ট অফ ভারত' (President of Bharat) লেখা হয়েছে। সংবিধান লঙ্ঘন করে দেশের নামও পাল্টে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। (G20 Summit 2023)
অন্য রাষ্ট্রের প্রধানদের নিয়ে জি-২০ সম্মেলনের আয়োজন হচ্ছে। এত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের সরকারি নিমন্ত্রণপত্রে 'India'র পরিবর্তে 'ভারত' লেখার সিদ্ধান্ত যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরাও। শুধু নিমন্ত্রণপত্রেই নয়, বিদেশি অতিথিতের যে পুস্তিকা পাঠানো হয়েছে, তাতেও 'India'র পরিবর্তে 'ভারত' লেখা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে, যার শীর্ষক হিসেবে লেখা হয়েছে, 'Bharat, The Mother of Democracy', অর্থাৎ 'ভারত, গণতন্ত্রের জননী'।
রাইসিনা হিলের তরফে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে যে নিমন্ত্রণপত্রে পাঠানো হয়েছে, তার প্রতিলিপি ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে নেট দুনিয়ায়। কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ ট্যুইটারে (অধুনা X) লেখেন, 'খবর তাহলে সত্য। ৯ সেপ্টেম্বর আয়োজিত জি-২০ সম্মেলনের নৈশভোজের নিমন্ত্রণপত্রে পাঠিয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবন। তাতে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ লেখা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে। সংবিধানের ২ নং অনুচ্ছেদে সাফ বলা রয়েছে, ‘ভারত অর্থাৎ ইন্ডিয়া, রাজ্যের সমষ্টি হিসেবে বিবেচিত হবে’। কিন্তু সেই যুক্তরাষ্ট্রের উপরই আঘাত হানা হচ্ছে’।
এর পাল্টা, বিজেপি-র তরফে 'India' পরিবর্তে ইংরেজিতে 'Bharat' লেখার সমর্থনে প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'ভারতীয় প্রজাতন্ত্র-আমাদের সভ্যতা দৃঢ় পদক্ষেপে অমৃতকালের দিকে এগোচ্ছে দেখে আনন্দ হচ্ছে,, গর্ববোধ করছি'।
দেশের সংবিধানে 'India' এবং 'ভারত' দুইের উল্লেখই রয়েছে। সাধারণ ইংরেজিতে 'India' লেখা হয়। কিন্তু পাকাপাকি ভাবে এবার দেশের নাম 'ভারত' লেখার বন্দোবস্ত করার তোড়জোড় চলছে বলে খবর। আগামী ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর সংসদে পাঁচ দিন ব্যাপী বিশেষ অধিবেশনের ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে এই প্রস্তাব তোবলা হতে পারে বলে খবর। তাতে সংবিধানের পরিবর্তন ঘটিয়ে দেশের নাম শুধুমাত্র ভারত করার সুপারিশ থাকবে। কিন্তু সেই বিল সংসদে ওঠার আগেই, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর পাঠানো চিঠিতে 'প্রেসিডেন্ট অফ ভারত' লেখা হল।
দেশের নাম হিসেবে শুধু 'ভারত' ব্যবহারের সপক্ষে বিজেপি যদিও যুক্তি দিতে দেরি করেনি। তাদের দাবি, 'INDIA' শব্দটি ঔপনিবেশিক শক্তির আমদানি করা। ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতীক হয়ে রয়ে গিয়েছে ওই নাম। সেই ইতিহাস পিছনে ফেলে এগোতে হলে, নামের মধ্যেও নিজস্বতা, নিজের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের ছোঁয়া রাখতে হবে। বিজেপি সাংসদ হরনাথ সিংহ যাদব সরাসরিই দেশের নাম পাকাপাকি ভাবে 'ভারত' করার প্রস্তাব দেন।
এই চিঠি ঘিরেই বিতর্ক।
বিজেপি-র অভিভাবক সংস্থা রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘও ইতিমধ্যে দেশের নাম পাকাপাকি ভাবে 'ভারত' করার পক্ষে সুর চড়িয়েছে। সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত খোলাখুলিই তার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, "INDIA শব্দটির ব্যবহার বন্ধ করা উচিত আমাদের। তার পরিবর্তে ভারত ব্যবহার করা উচিত। ইংরেজিভাষীদের সুবিধার জন্য INDIA বলি বটে, তাই ওটাই অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এবার অন্তত বন্ধ হওয়া উচিত। পৃথিবীর সব প্রান্তে ভারত হিসেবেই দেশকে উল্লেখ করা উচিত, সে কথায় হোক বা লেখায়।"
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বিরোধী জোটের নাম I.N.D.I.A রাখা নিয়েও কম টানাপোড়েন হয়নি। সেই আবহে ইংরেজি ভাষায় লেখা সরকারি চিঠিতে দেশের নাম 'INDIA' না লিখে 'ভারত' লেখায় বিতর্ক শুরু হয়েছে।