কলকাতা : গুরুর প্রতি শিষ্যের শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসাবে উদযাপন করা হয় এই দিন। বৈদিক মতে, প্রতি বছর আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পড়ে এই দিন। এবার গুরু পূর্ণিমা পড়েছে ২৪ জুলাই। জানেন কি এই দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ?


গুরু পূর্ণিমাকে কেন ব্যাস পূর্ণিমা বলে ?


শিষ্যরা এই দিনে গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ব্যাসদেবের জন্মজয়ন্তীও পালন করা হয় এই দিন। সেই কারণে এই বিশেষ দিনটিকে ব্যাস পূর্ণিমাও বলা হয়। হিন্দুদের বিশ্বাস, এই তিথিতেই মুণি পরাশর ও সত্যবতীর ঘরে ব্যাসদেবের জন্ম হয়। জন্মের পরে তাকে ত্যাগ করেন সত্যবতী। পরবর্তীকালে নিজের যোগ্যতায় মহর্ষি হয়ে ওঠেন ব্যাসদেব। চতুর্বেদের সম্পাদনা ছাড়াও ১৮টি পুরাণ রচনা করেন তিনি। মহান এই ঋষির হাত থেকেই মহাকাব্য মহাভারতের রচনা। বেদের ব্যাখা ও বিন্যাস ঘটিয়েছেন বলেই মহর্ষিকে বেদব্যাস বলা হয়।


বৌদ্ধদের মধ্যে গুরু পূর্ণিমার গুরুত্ব


বলা হয়, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে গুরু পূর্ণিমার গুরুত্ব অসীম। কথিত আছে, বোধিজ্ঞান লাভের পর আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় প্রথম সকলকে উপদেশ দেন গৌতম বুদ্ধ। সেই কারণে এই দিনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে। হিন্দু পুরাণে বলা আছে, এই তিথিতেই গুরু হিসাবে শিষ্যদের মহাজ্ঞান প্রদান করেন দেবাদিদেব মহাদেব। আদিযোগী শিব এই তিথিতেই আদিগুরুতে রূপান্তরিত হন। অত্রি, বশিষ্ঠ, পুলহ, অঙ্গীরা, পুলস্থ, মরীচি, ক্রতু এই সাতজন ঋষি ছিলেন মহাদেবের প্রথম শিষ্য। তাঁদেরই জ্ঞান প্রদান করেন আদিগুরু মহাদেব।


গুরু-শিষ্য সম্পর্ক


প্রাচীন সমাজে অত্যন্ত গুরুত্ব পেত গুরু-শিষ্য সম্পর্ক। সেই কারণে একটা দিন গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নিবেদন করত শিষ্য। সংস্কৃতে 'গু' শব্দের অর্থ অন্ধকার। 'রু' শব্দের অর্থ অন্ধকার দূরীকরণ। গুরু শব্দের অর্থ, যিনি শিষ্যদের অন্ধকার বা অজ্ঞতা থেকে আলোর দিশা দেখান সেই ব্যক্তি।


গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন


যে শ্লোকের মাধ্যমে গুরু পূর্ণিমাতে গুরুর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়.. 


''গুরুব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণু গুরুর্দেবো মহেশ্বর
গুরুরেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ''


এই শ্লোকের অর্থ- জীবনে গুরুই ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর। তিনিই আমাদের সৃষ্টি, স্থিতি, লয়ের পরম ব্রহ্মজ্ঞান দান করেন। সেই গুরুর উদ্দেশ্যে প্রণাম 
জানাই।


২০২১ সালের গুরু পূর্ণিমার তিথি ও নির্ঘণ্ট


গুরুপূর্ণিমা উদযাপন - ২৪ জুলাই, শনিবার


পূর্ণিমা তিথি শুরু- ২৩ জুলাই সকাল ১০টা বেজে ৪৩ মিনিট


পূর্ণিমা তিথি শেষ- ২৪ জুলাই, সকাল ৮টা বেজে ০৬ মিনিটে