নয়াদিল্লি: নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হয়েছিলেন একবছর আগেই। এবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার পদে উন্নীত হলেন জ্ঞানেশ কুমার। সোমবার তাঁর নিযুক্তির কথা জানানো হল কেন্দ্রের তরফে। বর্তমান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার মঙ্গলবার অবসর নিচ্ছেন। এর পরই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন জ্ঞানেশ কুমার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন কমিটির বৈঠকে তাঁকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যদিও লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গাঁধীর মত ছিল, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় না দেওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হোক। বুধবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি রয়েছে। (Gyanesh Kumar New CEC)
জ্ঞানেশ কুমারের নিযুক্তি ঘিরে ইতিমধ্য়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের যে নতুন কমিটি গড়েছে কেন্দ্র, তাতে প্রধানমন্ত্রী, তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতাকে রাখা হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতেই এই কাজ করেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার, যাতে কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য হয় তারাই। নিজেদের পছন্দের লোককে নিয়োগ করতে পারে তারা। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে বিরোধীদের মতামত কোনও ভাবে না খাটে। বর্তমানে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ এবং রাহুল গাঁধী ওই কমিটিতে রয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের মামলার উল্লেখ করে এই সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখতে আর্জি জানিয়েছিলেন রাহুল, কিন্তু তাঁর যুক্তি ধোপে টেকেনি বলে খবর। (Chief Election Commissioner)
২০২৪ সালের ১৪ মার্চ নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হন জ্ঞানেশ কুমার। তার দু'মাস আগেই IAS হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছিলেন তিনি। ১৫ মার্চ দায়িত্ব গ্রহণ করেন জ্ঞানেশ কুমার, আর তার ঠিক পর দিনই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। গত ১১ মাস ধরে নির্বাচন কমিশনের সদস্য জ্ঞানেশ কুমার। রাজীব কুমার, সুখবীর সিংহ সন্ধু এবং তিনি মিলে লোকসভা নির্বাচন, জম্মু ও কাশ্মীর নির্বাচন, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র এবং দিল্লি নির্বাচন সম্পন্ন করান।
২০২৯ সালের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত কার্যকালের মেয়াদ জ্ঞানেশ কুমারের। তাঁর কার্যকালের মধ্যে ২০টি বিধানসভা নির্বাচন, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন রয়েছে। ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যাবে। আদতে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। আইআইটি কানপুর থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। ১৯৮৮ ব্যাচের কেরল ক্যাডারের অফিসার জ্ঞানেশ কুমার। কোওপারেশন মন্ত্রকের সচিব ছিলেন ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। আধা সামরিক বাহিনীর সচিব, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব হিসেবেও কাজ করেছেন।
২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য সংরক্ষিত অনুচ্ছেগ ৩৭০ বাতিলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল জ্ঞানেশ কুমারের। সেই সিদ্ধান্তের ফলেই জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখকে দু'টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা হয়। জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন খসড়া বিলের দায়িত্ব তাঁর হাতেই তুলে দিয়েছিল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। অত্যন্ত গোপন রাখা হয়েছিল সেই বিল, যা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি কেউ।
পাশাপাশি, রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রে ট্রাস্ট গঠনেও যুক্ত ছিলেন জ্ঞানেশ কুমার। সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা চলছিল রাম জন্মভূমি নিয়ে, তার নথিপত্র দেখার দায়িত্ব ছিল তাঁরই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ হিসেবেও পরিচিত তিনি। জ্ঞানেশ কুমার কোঅপারেশন সচিব থাকাকালীন ২০২৩ সালে মাল্টি স্টেট কোঅপারেটিফ সোসাইটিজ সংশোধন আইন পাস হয়, যার আওতায় সমবায় ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে পদক্ষেপের কথা বলা হয়।