পায়েল মজুমদার, কলকাতা: বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তু, তর্কে বহুদূর! আর সেই বিশ্বাস অনুযায়ীই, বারাণসীর (Varanasi) মণিকর্ণিকা ঘাটে (Manikarnika Ghat) স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব হোলি খেলতে আসেন। তবে কোনও কৃত্রিম রং বা আবির দিয়ে নয়। তিনি চিতাভস্ম (Ashes From The Pyre) দিয়ে হোলি খেলেন এমনই বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাস থেকেই বারাণসীর মণিকর্ণিকা ঘাটে চিতাভস্ম মেখে হোলি খেলার প্রথা যা ধূমধাম করে উদযাপিত হল এই বছরও। 


কী হল?
চিতা জ্বলছে। কোনও নিথর দেহ পুড়ছে তাতে। পাশে সেই চিতার ছাই মেখে হোলি উদযাপনে মত্ত সন্ন্যাসী ও শিবভক্তদের একাংশ। 'রংভরি একাদশী' উপলক্ষ্যে মেতে ওঠাই এই উদযাপনের মূল কথা। কথিত আছে, এই রীতি বারাণসীর মতো প্রাচীন। হোলির পাঁচ দিন আগে থেকে উদযাপনের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। চলতি বছর শিবভক্তরা এক দুরন্ত শোভাযাত্রারও আয়োজন করেছিলেন এই উৎসব উপলক্ষ্যে। অঘোর পিঠ বাবা কীনারাম আশ্রম থেকে সেই শোভাযাত্রা শুরু হয়। প্রায় ৫০ হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছিল ওই শোভাযাত্রায়। প্রত্যেকেই দেবাদিদেবের বেশে যোগ দেন তাতে। প্রায় ৫ কিলোমিটার লম্বা ওই মিছিল সোনারপুরা, ভেলপুরা হয়ে রাজা হরিশচন্দ্র ঘাটে শেষ হয়। পাশাপাশি রীতিমাফিক চিতাভস্ম মেখে 'মসান হোলি'-র উদযাপনও হয়েছে সেখানে। 


কোথা থেকে  'রংভরি একাদশী' ?
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, মহাশিবরাত্রিতেই পার্বতীকে বিয়ে করেছিলেন দেবাদিদেব। তার পর কয়েকদিন স্ত্রীর পিতৃগৃহে থাকেনও। সপ্তাহদুয়েক পর এই 'রংভরি একাদশী'তেই পার্বতীকে নিয়ে বারাণসীতে এসেছিলেন মহাদেব। বিশ্বাসীদের কাছে তাই এই উৎসব অত্যন্ত পবিত্র। কথিত আছে, পাবর্তীর পতিগৃহে আসার বিষয়টি নিয়ে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে হইচই শুরু করেন শিবভক্তরা। কিন্তু যাঁরা সেই সুযোগ পাননি তাঁদের জন্য স্বয়ং মহাদেব মণিকর্ণিকা ঘাটে এসে চিতাভস্ম মেখে হোলির উদযাপনে সামিল হয়েছিলেন। সেখান থেকেই এই 'মসান হোলি' চলে আসছে। অতীতে স্রেফ ভক্ত ও সন্ন্যাসীরাই এই উদযাপনে সামিল হতে পারতেন। কিন্তু দিনে দিনে যে ভাবে এই হোলির জনপ্রিয়তা বেড়েছে তাতে কিছু গোষ্ঠী এখন নিজে থেকে এগিয়ে এসে ওই এলাকায় উদযাপনের আয়োজন করে। 


উদযাপনের ছবি...
উড়ছে চিতার ছাই। সঙ্গে লাল আবির। দেবাদিদেবের নামে ঘনঘন জয়ধ্বনি। মণিকর্ণিকা ঘাটের ছবিটা এই সময় একেবারে আলাদা। চিতার আগুন অবশ্য নেভেনি। তবে মৃত্যুর পাশেই জীবনের, আনন্দের, উদযাপনের সহাবস্থান খুঁজে নিয়েছে বারাণসী।


আরও পড়ুন:চলন্ত গাড়িতে ভয়াবহ আগুন, বরাতজোরে প্রাণরক্ষা চালকের