নয়াদিল্লি: পাহাড়-পর্বতই ছিল নেশা এবং পেশা। রোমাঞ্চের হাতছানিতে ছুটে যেতেন দুর্গম অঞ্চলে। নারী বলে কখনও অভিযানে যাওয়া আটকায়নি। পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট থেকে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বলে যখন ধরে নিয়েছিলেন সকলে, সকলকে ভুল প্রমাণিত করে জীবিত ফিরে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু অদৃষ্টের লিখন এড়াতে পারেননি শার্লট কন্যান্ট ফক্স।  পাহাড়-পর্বত জয় করে ফেরা শার্লট নিজের বাড়িতে পা পিছলে পড়ে গিয়ে মারা যান। (Charlotte Fox)


১৯৫৭ সালে আমেরিকার নর্থ ক্যারোলাইনায় জন্ম শার্লটের। আমেরিকার নাগরিক হিসেবে তিনিই প্রথম মহিলা, যিনি ৮০০০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতার তিনটি পর্বত জয় করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানে বেরোন শার্লট। স্কট ফিশারের নেতৃত্বে ১৯ জন অভিযাত্রীর দলে ছিলেন শার্লট। (Charlotte Fox Mountain Climber)


ওই অভিযানে শার্লটের সঙ্গী হয়েছিলেন তাঁর প্রেমিক টিম ম্যাডসেন। ১০ মে শার্লট এবং টিম এভারেস্ট ছুঁতে সফল হন। কিন্তু ক্যাম্পের উদ্দেশে নেমে আসার সময় প্রবল তুষারঝড়ের মুখোমুখি হন সকলে। তাপমাত্রা নেমে যায় -১০০ ডিগ্রিতে। ওই অভিযান নিয়ে লেখা 'Into Thin Air' বইয়ে সেই পরিস্থিতির বিশদ বর্ণনা রয়েছে। 


শার্লট জানান, কনট্যাক্স লেন্স পরে এভারেস্টে উঠেছিলেন তিনি। তুষারঝড় শুরু হওয়ার পর বাঁচার আর কোনও আশাই ছিল না তাঁদের। তীব্র ঠান্ডায় কনট্যাক্ট লেন্স পরা তাঁর চোখ পর্যন্ত জমে স্থির হয়ে গিয়েছিল। একহাত দূরত্বেও কিছু দেখা যাচ্ছিল না। তুষারক্ষতে পা নাড়ার শক্তি হারান তিনি। ফুরিয়ে যায় অক্সিজেনও। কোনও রকমে বরফের উপর নিজের শরীরটিকে কুণ্ডলী পাকিয়ে নেন।  তীব্র যন্ত্রণায় বাঁচার আশা ছেড়ে মৃত্যু চাইছিলেন খুব করে। 


ওই অভিযানে আট অভিযাত্রী মারা যান, যার মধ্যে তিন ভারতীয় অভিযাত্রীও ছিলেন, সুবেদার সেওয়াং মানলা, ল্যান্স নায়েক দোরজে মরুপ এবং হেড কনস্টেবল সেওয়াং আলজর। কিন্তুকে মৃত্যুকে হার মানিয়ে এভারেস্ট থেকে জীবিত ফিরে আসেন শার্লট। সেই ঘটনার পর আরও ২২ বছর বেঁচেছিলেন তিনি। সেই অভিযানের পরও আস্পেন স্কিয়িং কোম্পানির হয়ে স্কি প্যাট্রোলার হিসেবে কাজ করেন। ২০১৪ সালে Mount Elbrus-এর সাত শৃঙ্গ জয় করেন। ২০১৭ সালে জয় করেন ধবলগিরি, ২০১৬ সালে মানাসলু। দু'টির উচ্চতাই ৮০০০ মিটারের বেশি। মৃত্যুর আগে ৭১২৯ মিটার উঁচু Barunste পর্বত জয়ে করে ফিরেছিলেন।


কিন্তু ২০১৮ সালের ২৪ মে নিজের বাড়িতে মারা যান শার্লট। তাঁর বন্ধু অ্যালিসন ওসিয়াস জানান, ওই দিন কলোরাডোতে শার্লটের বাড়িতে অতিথি সমাগম হয়।। শার্লটের বাড়িতে সপ্তাহান্ত কাটানোর কথা ছিল অ্যালিসনেরও। সকলে মিলে পর্বত অভিযান নিয়ে তৈরি সিনেমা দেখার কথা ছিল তাঁদের। আবারও পর্বত অভিযানে যেতে চেয়েছিলেন শার্লট। 


কিন্তু ২৪ মে সন্ধেয় শার্লটের দুই বন্ধু বাইরে বেরিয়েছিলেন। আরও কয়েক জনের এসে পৌঁছনোর কথা ছিল। রাতে ওই দু'জন যখন ফেরেন তাঁরা, দেখেন সিঁড়ির কাছে কাঠের মেঝেয় শার্লটের নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় পা পিছলে তিনি পড়ে যান এবং মাথায় আঘাত পান। এর ফলেই শার্লট মারা যান বলে জানা যায়। তার কয়েক বছর আগে, ২০০৪ সালে শার্লটের স্বামীও প্যারাগ্লাইডিং দুর্ঘটনায় মারা যান। কিন্তু যে শার্লট গোটা জীবন পাহাড়-পর্বত জয় করে ফেরেন, তিনি বাড়ির সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মারা যাবেন, তা কল্পনাও করতে পারেননি তাঁর পরিবার, আত্মীয়-স্বজনরা। পর্বত অভিযানে যাওয়া মেয়েদের কাছে আজও অনুপ্রেরণা হয়ে রয়েছেন শার্লট।