নয়াদিল্লি: বিরাট কিছু পটপরিবর্তন না ঘটলে এটা নিশ্চিত, জো বাইডেনই আমেরিকার আগামী প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন আর এক ডেমোক্র্যাট সেনেটর কমলা হ্যারিস। এখন বাইডেন-হ্যারিস উভয়েই নরেন্দ্র মোদির কাশ্মীর নীতির প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছেন, বিরোধিতা করেছেন নাগরিকত্ব আইনেরও। বসে নেই দিল্লিও। নতুন পরিস্থিতি বুঝে কূটনীতির ঘুঁটি সাজাচ্ছে তারা।

বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মার্কিন বিদেশনীতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের তেমন সুযোগ নেই মেনে নিলেও হোয়াইট হাউসে পরিবর্তন হচ্ছে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছে দিল্লি। আমেরিকায় কর্মরত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তরণজিৎ সিংহ সাঁধু ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করছেন। কিছু বৈঠকের কথা প্রকাশ্যে এসেছে, কিছু রয়েছে গোপনে।

ভারত এই মুহূর্তে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে বারাক ওবামা আমলে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ থাকা ২ ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে। এঁরা হলেন বিবেক এইচ মূর্তি এবং রাজ শাহ। ২০১৪-য় বিবেক ওবামার তরুণতম সার্জন জেনারেল ছিলেন, বাইডেনের প্রচারেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ভূমিকা নেন, সম্ভবত মন্ত্রিসভায় থাকছেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, রাজীব ওরফে রাজ শাহ বাইডেন প্রশাসনের ভারত কেন্দ্রিক পদক্ষেপগুলিতে বড় ভূমিকা নেবেন। ওবামা আমলে তিনি ছিলেন আন্ডার সেক্রেটারি ফর রিসার্চ, এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক্স এবং মার্কিন কৃষি বিভাগের চিফ সায়েন্টিস্ট।

এছাড়া সাঁধু যোগাযোগ রেখেছেন কংগ্রেসনাল ব্ল্যাক ককাস গোষ্ঠীর সঙ্গে। আফ্রিকান-আমেরিকান কংগ্রেস সদস্যদের এই গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছেন কমলা হ্যারিসও। এছাড়া গত ৬ মাসে তিনি দেখা করেছেন হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স চেয়ারম্যান এলিয়ট এঞ্জেলের সঙ্গে। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডেমোক্র্যাট অ্যামি বেরার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। অ্যামি এ বছর ভোটে জিতেছেন, জিতেছেন আর এক ডেমোক্র্যাট ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রমীলা জয়পালও। কিন্তু কাশ্মীর ইস্যুতে প্রমীলার অবস্থান ভালভাবে নেয় না দিল্লি। গত বছর আমেরিকা সফরের সময় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের একটি দলের সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকার করেন, কারণ প্রমীলা ওই দলে ছিলেন। জয়শঙ্কর পরে বলেন, প্রমীলার সঙ্গে দেখা করার তাঁর কোনও আগ্রহ নেই। সে সময় প্রমীলাকে সমর্থন করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনীত কমলা হ্যারিস। হ্যারিস আবার বলেছিলেন, তাঁরা কাশ্মীরের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। ডেমোক্র্যাটরা সিএএ-রও বিরোধিতা করেন। আবার গত বছর হিউস্টনে হাউডি মোদি অনুষ্ঠানে মোদি আবকি বার, ট্রাম্প সরকার স্লোগান তোলায় দেশে বিরোধী দলগুলি তাঁর সমালোচনা করে। তারা বলেছিল, ভারত-মার্কিন সম্পর্কে সম্ভাব্য তিক্ততা তৈরি করছেন প্রধানমন্ত্রী, যদি কোনও ডেমোক্র্যাট হোয়াইট হাউসে আসেন, তবে এর প্রভাব পড়তে পারে।

যদিও এ বছর ১৫ অগাস্ট থেকে বাইডেন বেশ কয়েকবার ভারত সম্পর্কে তাঁর অবস্থান বদলানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। আঞ্চলিক সঙ্কট থেকে সীমান্ত সমস্যা, সবেতেই ভারতের পাশে থাকবেন বলে ঘোষণা করেন তিনি। বাণিজ্য ও পরিবেশ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলিও এক সঙ্গে মোকাবিলা করবে দুই দেশ। ট্রাম্প যখন ভারতের বাতাস নোংরা বলেছিলেন, তখন বাইডেন বলেন, কেউ এভাবে বন্ধুদের সম্পর্কে কথা বলে না, পরিবেশ পরিবর্তনের মত সঙ্কটেরও এভাবে মোকাবিলা করা যায় না।

ফলে মনে করা হচ্ছে, ভারত সরকার বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গেও সখ্যতা গড়ে তুলতে পারবে। নভেম্বরের ভোট থেকে জানুয়ারিতে বাইডেনের সরকার তৈরি করা- এই সময়টা এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ।