পায়েল মজুমদার, কলকাতা: আর কদিন বাদেই রঙের (Holi 2023) উৎসব। আবির ও জলরঙে একে-অন্যকে রাঙিয়ে দেওয়ার মন খোলা প্রতিযোগিতা। কিন্তু এ দেশ তো বরাবর 'নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান'-র আদর্শে বিশ্বাসী! তাই একপ্রান্তে যখন গানে-নাচে-রঙে বসন্তকে স্বাগত জানানো হয়, অন্য প্রান্তে সেই উৎসবেই 'খেলাযুদ্ধের'আসর বসে। পঞ্জাবে (Punjab) এই রীতির নাম 'হোলা মহল্লা' (Hola Mohalla)। হোলি উপলক্ষ্যেই একেবারে জমে ওঠে শিবালিক পর্বতের কোলে আনন্দপুর সাহিব শহর।
হোলা মহল্লা কী?
শিখ ধর্মবিশ্বাসীদের একাংশের কাছে, অত্য়ন্ত পবিত্র এই উৎসব। তাঁদের দশম গুরু, গুরু গোবিন্দ সিংহ এই প্রথা চালু করেছিলেন। ইতিহাস বলছে, সময়টা ১৭০১ ক্রিস্টাব্দ। শিবালিক পর্বতের সানুদেশে 'আনন্দপুর সাহিব' শহরে প্রথম এই উৎসব উপলক্ষ্যে 'খেলাযুদ্ধ' করেছিলেন গুরু গোবিন্দ সিংহ। চরনগঙ্গা নদীর তিরে এই উৎসবে সামরিক শক্তি প্রদর্শন করাই রীতি যা চলে আসছে গুরু গোবিন্দ সিংহের আমল থেকে। 'হোলা' কথাটি আসলে 'হোলি' শব্দের পুরুষ-প্রতিশব্দ। আর পঞ্জাবি ভাষায় 'মহল্লা' কথাটির মানে সুশৃঙ্খল মিছিল। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, সেনাবাহিনীর নিয়মনীতি মেনে তৈরি মিছিলের সারি। তবে দুটি শব্দ একসঙ্গে মিলে গেলে যা দাঁড়ায় তার অর্থ 'মক ফাইট'। এই উৎসব আসলে 'মক ফাইট'-র যেখানে কাড়া-নাকাড়া বাজিয়ে, রণসাজে খেলাযুদ্ধ চলে।
দিনক্ষণ?
শিখদের অত্যন্ত পবিত্র এই উৎসব সাধারণত মার্চ মাসেই হয়ে থাকে। 'হোলি'-র ঠিক একদিন পরে 'হোলা মহল্লা'-য় মেতে ওঠেন উত্তর-পশ্চিম ভারতের এই রাজ্যের বহু মানুষ। তিন দিন ধরে উৎসব চলে। 'মক ফাইট'-র পাশাপাশি অস্ত্র প্রদর্শনীও হয়। তবে শুধুই যে সামরিক মেজাজ এই উৎসবের মূল কথা, তা নয়। কীর্তন, গান এবং কবিতা প্রতিযোগিতাও হয়ে থাকে এই উৎসবে। যদিও প্রথম আকর্ষণ 'মক ফাইট'-ই। সত্যিকারের অস্ত্র নিয়ে রোমহর্ষক সব প্রদর্শনী করেন অনেকে। ঘোড়সওয়ারি, ছুটন্ত ঘোড়াদের পিঠে দুই পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা-সহ আরও নানা কসরৎ দেখানো হয়। ইতিহাসবিদরা মনে করেন, অতীতের লড়াইকে সম্মান জানাতেই এই উৎসব। খেলাযুদ্ধের পাশাপাশি অবশ্য ধর্মপ্রাণ শিখরা এই সময় 'লঙ্গর'সেবাতেও হাত লাগান। আনন্দপুর সাহিবে আসা লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা হয় এখানে।
নিহাঙ্গ শিখদের উৎসব...
গুরু গোবিন্দ সিংহের 'নাইট' হিসেবে নিহাঙ্গ শিখদের মধ্যে এই উৎসব নিয়ে উৎসাহ সবচেয়ে বেশি। অস্ত্রের ব্যবহার থেকে খেলাযুদ্ধ, সবেতেই মূলত অংশ নেন নিহাঙ্গ শিখ সম্প্রদায়ের মানুষজন। উৎসবের শেষ দিনে এক বিশাল মিছিল শিখদের অত্যন্ত পবিত্র পাঁচ ধর্মস্থানে সফর করে। সবটাই হয় 'হোলি'-র সময়ে। দেশের এক বিশাল অংশ যখন আবির, রং, মিষ্টি ও ঠান্ডাইয়ের মেজাজে মেতে ওঠে, পঞ্জাব তখন ফিরে দেখে তার লড়াইয়ের বর্ণময় ইতিহাস যার একটুকরো ধরা রয়েছে 'হোলা মহল্লা'-য়।
আরও পড়ুন:ইএম বাইপাসে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে দুমড়ে গেল গাড়ি